ডিসি-ইউএনওরা চান বাড়তি তেল খরচ, পুলিশ চায় আরও যানবাহন
হরতাল-অবরোধ প্রতিরোধ ও নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে গাড়ির তেল খরচ বাবদ বাড়তি টাকা চাচ্ছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন জেলা সফরকালে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছেন জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনাররা।
এছাড়া, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে জরুরি ভিত্তিতে গাড়ি কেনার জন্য টাকা ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে পুলিশ।
আর হরতাল-অবরোধ চলাকালে 'অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত' এর আওতায় রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের জন্য প্রতি দুইদিনে ১.২৮ কোটি টাকা চাচ্ছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সময় সরকার যখন বিভিন্নখাতে ব্যয় কমিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছে, তখন সরকারের এসব সংস্থা থেকে নিত্যনতুন চাহিদা আসায় চাপে পড়ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
তারা জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেটে কৃচ্ছ্রতাসাধনের অংশ হিসেবে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ হ্রাস করার নির্দেশনা জারি করা হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের কথা বলে শতভাগ ব্যয় করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেটে জেলা সরকারি সড়ক পরিবহনে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্টখাতে ৩৫ কোটি টাকা এবং উপজেলা সরকারি সড়ক পরিবহনে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী এর ৮০ শতাংশ বা ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
নির্বাচনের কারণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যাতে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে বরাদ্দের পুরো ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়, সেজন্য অর্থ বিভাগের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাসুদুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ১৬ নভেম্বর অর্থ সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে মাসুদুল হাসান বলেছেন, 'নির্বাচন যথাযথভাবে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে পরিবহন সেবা অন্যতম সহায়ক। পরিবহন সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে যানবাহন ও জ্বালানি উভয়েরই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা জরুরি।'
এতে বলা হয়েছে, 'দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনী কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত মাঠ প্রশাসনের জন্য পরিবহন সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলা সড়ক পরিবহন ও উপজেলা সড়ক পরিবহনে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে বাজেট বাড়ানো আবশ্যক।'
মাঠ প্রশাসনের জন্য জ্বালানিখাতে বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বিভিন্ন আন্তঃদপ্তর সমন্বয় কাজের পরিধি বাড়ার কারণে ভিআইপি, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন বেড়েছে। একইসঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজও বেড়েছে।
নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের আগমন, পাবলিক পরীক্ষা ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে জেলা প্রশাসনকে অতিরিক্ত গাড়ি রিকুইজিশন করে ব্যবহার করতে হয়। ফলে অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বর্তমান চাহিদা পর্যালোচনায় আগামী জুন পর্যন্ত আরও ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
২৮টি ডাবল-কেবিন পিক-আপ কিনতে চায় পুলিশ
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য এর আগে ৯০টি ডাবল কেবিন পিক-আপ কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকে ২৮টি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন এই ২৮টি গাড়ি কেনার জন্য জরুরিভিত্তিতে ১৫.৪০ কোটি টাকা ছাড় করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদরদপ্তরের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে এসব গাড়ি কেনা হবে। প্রতিটি গাড়ির দাম হবে ৫৫ লাখ টাকা।
পুলিশ সদরদপ্তর বলেছে, পুলিশের অপারেশনাল কাজ এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জরুরি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে চলতি অর্থবছর ২৮টি ডাবল কেবিন পিক-আপ দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেনা প্রয়োজন।
আরও বরাদ্দ চায় আনসার
এদিকে, হরতাল-অবরোধ প্রতিরোধে মোতায়েন করা আনসার সদস্যদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
'অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত' বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের অঙ্গীভূতকরণ বাবদ বিল উপস্থাপন করে সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশনস) সৈয়দ ইফতেহার আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে– রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থানা ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ১০ হাজার সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এসব সদস্যদের দৈনিক খোরাকি ভাতা, অন্যান্য মনিহারি ব্যয় ও যাতায়াত বাবদ দুইদিনে ১.২৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
দেশের সমতল এলাকার ১,৪৪০টি পয়েন্টে এবং পার্বত্য এলাকার ৩২টি পয়েন্টে আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এরমধ্যে সমতলে মোতায়েন রয়েছে ৯,৮২০ জন ও পার্বত্য এলাকায় ১৮০ জন।
বিলে জনপ্রতি দৈনিক খোরাকি ৫০০ টাকা, মনিহারি ব্যয় ১০০ টাকা এবং যাতায়াত বাবদ ২০০ টাকা করে হিসাব করা হয়েছে।