ভোটকেন্দ্রে এবার পুলিশের উপস্থিতি বাড়বে
ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে এবার প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে পুলিশ সদস্য বাড়ানোর চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। যেহেতু কেন্দ্র প্রায় ৪২ হাজার, তাই এবার পুলিশের সদস্যও প্রায় ৪২ হাজার জন বাড়বে।
ইসি সূত্র বলছে, বিগত নির্বাচনের তুলনায় কেন্দ্রপ্রতি একজন করে পুলিশ সদস্য বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে ইসির। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১ জন অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২ জন অস্ত্রসহ মোতায়েন করা হত। এবার সেখানে সাধারণ কেন্দ্রে ২ জন অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৩ জন অস্ত্রসহ মোতায়েন করার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া আনসার (১২ জন) ও গ্রাম পুলিশের (১/২ জন) সংখ্যা আগের মতই থাকার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে সোমবার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে একটি সভা হয় ইসির। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৭৪৭, ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকরা জানতে চান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতজন দায়িত্ব পালন করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচনে দ্বায়িত্বে আনসার থাকবে ৫১৬,০০০; কোস্টগার্ড থাকবে ২,৩৫০; বিজিবি থাকবে ৪৬,৮৭৬; আর পুলিশ ও র্যাব সদস্য থাকবে ১৮২,০৯১ জন। সেনাবাহিনীর বিষয়ে কমিশন পরে সিদ্ধান্ত নিবে।
ইসি সূত্র জানায়, এবারের সংসদ নির্বাচনেও তিন হাজারের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হতে পারে। এছাড়া নিয়োজিত করা হতে পারে এক হাজারের মতো বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও।
সূত্র আরও বলছে, কেন্দ্রের দ্বায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৫ দিন করে দ্বায়িত্বপালন করবে- নির্বাচনের আগে ২ দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর ২ দিন। এছাড়া পুলিশের ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যদের ১৩ দিন করে নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
কারা কত ভাতা পাবে- এর উত্তরে সূত্র জানায়, পুলিশের কনস্টেবল পাবে প্রতিদিনের জন্য ৪০০ টাকা। এরপর র্যাংক অনুযায়ী এই বিল বাড়বে। পুলিশের অফিসার পর্যায়ে পাবে সর্বোচ্চ বিল ১,৬০৬ টাকা। অনুরূপভাবে, আনসারের সদস্যদের একদিনের সর্বনিম্ন বিল ৬৩৭ টাকা আর অফিসারের র্যাংক অনুযায়ী সর্বোচ্চ বিল ১,৮০০ টাকা।
একইভাবে কোস্টগার্ডের জন্য বরাদ্দ সর্বনিম্ন ৬৩৭ টাকা আর সর্বোচ্চ ১,৮২০ টাকা ও বিজিবির সদস্যরা ৪০০ টাকা থেকে ১,২২৫ টাকা পাবে।
তবে এর বাইরে পরিবহন বিল, গাড়ির তেলের খরচ সহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু খরচ যুক্ত হবে।
আনসার সদস্যরা পাঁচদিনের জন্য কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকলেও তাদের ছয় দিনের সম্মানী দেওয়া হবে। পরিবহন খরচ হিসাবে একদিনের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আনসার সদস্য না থাকায় তাদের অতিরিক্ত এই একদিনের ভাতা দেওয়া হবে।
এর আগে নির্বাচনে দায়িত্বপালনের জন্য বাহিনীগুলো মোট ১,০৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল।
সবচেয়ে বেশি টাকা চেয়েছিল পুলিশ। বাহিনীটির চাহিদা ছিল ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আনসার বাহিনীর চাহিদা ছিল ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। বিজিবি ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ, র্যাব ৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ও কোস্টগার্ড ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা চেয়েছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসি উক্ত ভাতা নির্ধারণ করেছে ইসি। কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা ব্যয়ের খাত থেকে এসব ব্যয় মেটানো হবে। প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকে নতুন অর্থ বরাদ্দ চাওয়ার সুযোগ রয়েছে ইসির।
ইসি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ব্যয়ের একটি সম্ভাব্য বাজেট তৈরি করেছিল। তাতে সর্বমোট ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য মোট ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল; পরে তা আরও বেড়েছিল।