নির্বাচনের আগে বিরোধীদের টার্গেট করে দমন-পীড়ন চলছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ দেশটির বিরোধী নেতা-কর্মী-সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করছে বলে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এ সংগঠন রোববার (২৬ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ কথা বলে।
এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে আজ প্রকাশিত হয়েছে বিবৃতিটি।
সংগঠনটি বলে, "গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি পূর্বপরিকল্পিত সমাবেশের পর থেকে প্রায় ১০ হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান সহিংসতায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ।"
এইচআরডব্লিউ'র এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন, "বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক অংশীদারদের কাছে দাবি করছে, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু একই সঙ্গে দেশটির রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের দিয়ে কারাগার ভরে ফেলছে।"
জুলিয়া ব্লেকনার আরও বলেন, "বাংলাদেশের কূটনৈতিক অংশীদারদের বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত যে সরকারের কর্তৃত্ববাদী দমন–পীড়ন ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বিপন্ন করবে।"
ব্লেকনার বলেন, "কোনো দেশের সরকার যখন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশে বাধা দেয় ও বিরোধীদলের নেতাকর্মী, সমালোচক এবং অ্যাক্টিভিস্টদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, জোরপূর্বকভাবে গুম, হয়রানি করে, ভয় দেখায় তাহলে সেখানে অবাধ নির্বাচন অসম্ভব।"
এইচআরডব্লিউ'র এ কর্মকর্তা আরও বলেন, "সহিংসতা প্ররোচিত করা এবং তার সমালোচকদের কারাগারে পাঠানোর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত অবিলম্বে নির্বিচারে রাজনৈতিক গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানানো। তার এটি স্পষ্ট করা উচিত যে, নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং হত্যা সহ্য করা হবে না।"
সংগঠনটি বলেছে, ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষাৎকার, ভিডিও ও পুলিশ প্রতিবেদন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তারা প্রমাণ পেয়েছে, "নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনী অতিমাত্রায় বল প্রয়োগ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।"
"২৮শে অক্টোবরের সহিংসতার পর, বিএনপি ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়, সেসময় এবং এর পরে পুলিশ, বিরোধী দলের সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে," বলে সংগঠনটি।
এইচআরডব্লিউ আরও বলেছে, "বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিরোধী দলীয়দের বিরুদ্ধে 'বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির' অভিযোগ এনেছে এবং ক্রাইম সিন হিসেবে বর্ণনা করে বিএনপির দলীয় কার্যালয়গুলো সিলগালা করে দিয়েছে।"
"প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন নেতারা বিরোধীদলীয় বিক্ষোভকারীদের উপর আক্রমণকে উৎসাহিত করে প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে চলমান সহিংসতায় ইন্ধন যুগিয়েছেন," যোগ করে তারা।