বিএনপি, ইসলামী ও বামপন্থী দলগুলোর সংলাপে নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে ঐক্যমত্য
বিএনপি এবং দেশের ডানপন্থী ও বামধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যের আহ্বান নিয়ে এক সংলাপে বসেছে। এ সংলাপের উদ্যোগ নেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এতে যোগ দিয়ে ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন, সরকার পতন ও রাষ্ট্র মেরামতে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাঁর মধ্যে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানান, সংলাপে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো হলো– বিএনপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদের দুই অংশ, গণফোরামের একাংশ, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ, ভাসানী পরিষদ, খেলাফত মজলিস এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের দিন সবাইকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানান। সংলাপের শেষে এ আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, 'কোনো ইসলামি দল জালেম সরকারের সঙ্গে হাত মেলাবেন না। স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসীরা নীলনকশার নির্বাচনে যাবেন না।' তিনি বলেন, সংলাপ শুরুর আগেও উপস্থিতি নিয়ে সংশয় ছিল। সবাইকে দেখে বুক ভরে গেল। সবার মতামত পাওয়া গেল। অচিরেই করণীয় উপস্থাপন করা হবে।
সংলাপের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া জাতীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব ইসলামী আন্দোলনকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, 'সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম আজ বাম–ডান সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। মজলুমদের ঐক্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বস্ত নেতৃত্ব চায়, এ দায়িত্ব নিতে হবে।'
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ইতিমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়ে গেছে। সবাই এখানে একত্র হয়েছে। তিন বড় রাজনৈতিক দল– বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামী একসঙ্গে ডাক দিলে একাত্তরের মতো সবাই নেমে আসবে সরকারের বিপক্ষে।
প্রথমবারের মতো কোনো ইসলামি দলের সভায় অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঘরে আগুন লাগলে তখন শুধু ঘরের লোক নয়, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে ডাকতে হয়। দেশে আগুন লেগেছে বলেই প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ইসলামি ধারার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকারকে বড় একটা ধাক্কা দেওয়া দরকার, যেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে পারে।
এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দুই কারণে ঐক্য হয়। একটি হলো লাভের জন্য, অন্যটি ভয় থেকে। মানুষকে তার অধিকার হারানোর বিষয়টি হয়তো বোঝানো যাচ্ছে না। এক সপ্তাহের খোরাকি হাতে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিরোধ করা যায়নি। ২০১৮ সালে 'ভোট ডাকাতি' হয়েছে। এ সরকারের সঙ্গে সংলাপ করে কিছু হবে না। দল–মত সবাই মিলে রাজপথের আন্দোলনে নামতে হবে। না হলে কিছুই হবে না।
সংলাপ সঞ্চালনা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। এতে আরও বক্তব্য দেন এলডিপির মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, এনডিপির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের, ভাসানী পরিষদের হাবিবুর রহমান, বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি খলিলুর রহমান মাদানী, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।