তালিকাভুক্ত ঠিকানায় গিয়ে সায়মা ওয়াজেদের সূচনা ফাউন্ডেশনের অস্তিত্ব পায়নি দুদক
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, এটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে দুদক বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া ঠিকানাগুলোতে ফাউন্ডেশনটির খোঁজ চালায়। তবে এর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ধানমন্ডিতে সূচনা ফাউন্ডেশনের তালিকাভুক্ত ঠিকানায় অভিযান চালানোর পর দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম নিশ্চিত করেন যে, সেখানে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কার্যক্রমের অস্তিত্ব মেলেনি।
দুদক সূত্র জানায়, সূচনা ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক অনুদান নিয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা 'অটিস্টিক সেল'-এর অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে এবং কর ছাড় সুবিধা পেতে এনবিআরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, ব্যক্তিদের অনুদান দিতে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে। দুদক এসব অভিযোগ তদন্ত করছে।
দুদকের এক সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল এসব অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রমাণ সংগ্রহ করা।
এর আগে, গত বছরের ২১ নভেম্বর সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়।
মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়বিক ব্যাধি, অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দিতে নিবন্ধিত সূচনা ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ডা. মাজহারুল মান্নান ও জয়ন বারী রিজভী।
২০১৪ সালে সূচনা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০২৩ সালে বেনার নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সায়মা ওয়াজেদের মা, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দান হিসেবে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য প্রায় ১০ লাখ ডলার সহায়তা নিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে সায়মা ওয়াজেদের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে।
সমালোচকদের অভিযোগ, তার যোগ্যতা অন্যান্য প্রার্থীর তুলনায় কম ছিল এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
দুদকের তথ্যমতে, বাংলাদেশ যখন তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে মনোনীত করেছিল, সায়মা ওয়াজেদ সে সময় কানাডার নাগরিক ছিলেন।
সায়মা ওয়াজেদের নিয়োগে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার ও নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দ্য ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে, অন্য অনেকের মতো সায়মা ওয়াজেদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নৈতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক কমিটির প্রবিধানের ৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার জন্য শক্তিশালী প্রযুক্তিগত এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রাজ্ঞতা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং জনস্বাস্থ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ থাকা আবশ্যক।
দ্য ল্যানসেট জানিয়েছে, সায়মা ওয়াজেদের আছে শুধু ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি রয়েছে। এছাড়া তার আর কোনো আনুষ্ঠানিক মেডিকেল বা জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা নেই।
২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি।
অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করায় তার বৈশ্বিক স্বাস্থ্যে সীমিত কাজের অভিজ্ঞতা আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চ্যাথাম হাউসে উপদেষ্টার ভূমিকা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী নেপালের শম্ভু প্রসাদ আচার্য সংস্থাটির সঙ্গে অন্তত ৩০ বছর কাজ করেছেন। জনস্বাস্থ্যে ডক্টরেট ডিগ্রিও রয়েছে তার।
যুক্তরাজ্যের ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার একটি নিবন্ধেও তার মনোনয়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
সায়মা ওয়াজেদের মনোনয়নের সমালোচনা করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্যনীতি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, 'এটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের রাজনৈতিকীকরণের প্রতিফলন।'
ওই বিশেষজ্ঞ ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, 'তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন এবং তার মা প্রধানমন্ত্রী [...] তিনি যে কাজই করেন, তারা [সরকার] তা হাইলাইট করে।'