হামলাকারীদের বিচার দাবিতে বরিশালের ১৬ রুটে বাস চলাচল বন্ধ
বরিশালের রূপাতলীতে বাস ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট শুরু করেছে বাস শ্রমিক সংগঠন। এতে করে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি রুটে।
শুধু বাসই নয়, দূর পাল্লায় যাত্রী নিতে চাওয়া থ্রি-হুইলারগুলোও আটকে দিচ্ছেন শ্রমিকরা।
আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ভোর থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এতে বরিশাল থেকে খুলনা, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি, নলছিটি, বেতাগী, বরগুনা, লেবুখালি, বাউফল, দশমিনা, পটুয়াখালি, আমতলী, কুয়াকাটা ও ভোলা, রুটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
বরিশাল থেকে ঝালকাঠি যাবেন নাজমুন্নাহার। তিনি বলেন, "আমি ঢাকা থেকে পরিবহনে এসে রূপাতলীতে নেমেছি। এখান থেকে কোনো রুটে বাস চলছে না। দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে আছি।"
আরেক যাত্রী মাসুদ রানা বলেন, "বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছি। মানুষের চলাচলের মাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে দাবি আদায় কোনো আন্দোলন হতে পারে না। ঘটনার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করি।"
শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, "গতকাল আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে শ্রমিকরা আজকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না।"
আরেক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজুর রহমান বলেন, "আজ আমার পরীক্ষা ছিল। খুব ভোরে বরগুনা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখি বাস চলছে না। এমনকি, অন্য গাড়িতে যেতে চাইলেও যেতে দিচ্ছে না। গতকালকের ঘটনার সূত্র ধরে বাস মালিক, শ্রমিকরা বাড়াবাড়ি রকমের করছে।"
এদিকে, রূপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, "শ্রকিদের কাজ ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য বরিশাল বিভাগের ১১টি বাস মালিক সমিতি ও ১১টি শ্রমিক ইউনিয়নের ঐক্য পরিষদ মিলে কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছে। এতে করে ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে।"
তিনি বলেন, "শ্রমিকরা আজীবন মার খেয়ে যাচ্ছে, আর সকলকে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বিনা কারণে আমাদের ওপর হামলা চালায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দিবে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের আইডি কার্ড দেখিয়ে পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় স্বজনেরাও হাফ ভাড়া করে নেয়। এভাবে হলে আমরা খাবো কী? আমাদেরও তো পরিবার, সন্তান আছে।"
আবুল কালাম বলেন, "ছাত্ররা গতকাল দলবদ্ধভাবে এসে আমাদের ওপর যেভাবে হামলা করেছে তাতে আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমাদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও কেউ দেখবে না। এসব ভয় থেকেই শ্রমিকরা আর সড়কে গাড়ি চালাতে চায় না।"
রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, "গতকাল ঝালকাঠি রুটের একটি বাসে বিএম কলেজের এক ছাত্রীর হাফভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। এ বিষয়ে বিচার চাইলে শিক্ষার্থীরা ঝালকাঠি মালিক সমিতির কাছে চাইতে পারতো। কিন্তু রূপাতলীতে বিক্ষোভ করে বাস ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা ভয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে চাইছে না।"
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে ঝালকাঠি রুটে এক ছাত্রীর সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগে রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময়ে শ্রমিকদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থানকারী বাস ভাংচুর করেন এবং টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
তারা অসৌজন্য আচরণকারী শ্রমিক, হামলাকারী শ্রমিক গ্রেপ্তারসহ ৮ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে দেন। এদিকে, রাতেই কর্মবিরতির ঘোষণা দেন পরিবহন শ্রমিকরা।