১৯৭১ সালে তার ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে কিসিঞ্জারের ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল: মোমেন
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মোমেন বলেন, কিসিঞ্জার যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্বকে সমর্থন করেছিলেন এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে তিনি ক্ষমা চাননি।
ডব্লিউআইওএন'র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) স্নায়ুযুদ্ধের পররাষ্ট্রনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কিসিঞ্জার ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন।
কিসিঞ্জারের সামগ্রিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে মোমেন বলেন, 'হেনরি কিসিঞ্জার একজন আইকনিক কূটনীতিক ছিলেন, তিনি কূটনৈতিক বিশ্বে বিশেষ করে বিদেশে মার্কিন নীতি প্রণয়নে অপরিসীম ভূমিকা পালন করেছেন।'
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭১ সালে কিসিঞ্জারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে পিছপা হননি। তিনি বলেন, 'কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৭১ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধেই ছিলেন।'
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সমর্থনের জন্য 'সমস্ত আমেরিকান আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং পাকিস্তানের অবৈধ দখলদার বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহে তার (কিসিঞ্জারের) ভূমিকার' কথা উল্লেখ করেন মোমেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কিসিঞ্জার যে নিক্সন প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তা ভারতবিরোধী শক্ত অবস্থানে ছিল এবং পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের ফলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায় এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। তিনি বলেন, 'একজন স্মার্ট মানুষের জন্য এ ধরনের অমানবিক কাজ করা খুবই দুঃখজনক। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।'
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ পাঠিয়েছিল, যদিও এটি পাকিস্তানি সামরিক সংস্থার কাজে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, 'জেনারেল ইয়াহিয়াকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিসিঞ্জার এসব কাজ করেছেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।'
মোমেন বলেন, 'আপনি যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেন, তখন এটি ফ্যাক্ট বেজড হওয়া উচিত, আবেগের বশে নয়। দুর্ভাগ্যবশত, কিসিঞ্জারের মতো এত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোয় বাংলাদেশের জনগণের কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল।'