মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ।
স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণে যে খসড়া ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে, সেটি আগামী ১২ ডিসেম্বর আইএমএফের পরবর্তী বোর্ড সভার আগেই চূড়ান্ত হবে। ওই সভায় বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন করা ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত ফর্মূলার অনুমোদন দেওয়ার পর তা বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
জ্বালানি তেল আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, বিতরণ ও বিক্রির জন্য সরকারের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালুর সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হবে। আগামী ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নতুন সরকারের অধীনে তা কার্যকর করা হবে।
গত কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত ওঠানামা করছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমলেও আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তা বেড়েছিল।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ আগষ্ট জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে, আবার বেড়েছেও। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে।
এ অবস্থায় সরকারের পরিকল্পনা ছিল চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করা। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক বাজারের অনিশ্চিত পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটি করা হয়নি। এর ফলে বিপিসি গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
দিনের বিনিময় হার অনুযায়ী হিসাব করা হবে আমদানি ব্যয়
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় হিসাব করা হবে যেদিন মূল্য পরিশোধ করা হবে, সেদিনের বিনিময় হার অনুযায়ী। এর সঙ্গে শুল্ক-কর, ডিলার কমিশন, বিপিসির উন্নয়ন কর্মকান্ডের সম্ভাব্য ব্যয়, পরিচালন ব্যয় ও পরিবহন ফি এবং কিছু মুনাফা যুক্ত করে দাম নির্ধারণ করা হবে। প্রতি মাসে সমন্বয় করা হবে জ্বালানি তেলের দাম।
কর্মকর্তারা আরও জানান, 'ইমপোর্ট প্যারিটি প্রাইসের' ভিত্তিতে ফর্মুলা প্রণয়ন করা হচ্ছে। অর্থাৎ আমদানি ব্যয় অনুযায়ী দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামা করবে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বিবেচনায় নেওয়া হবে। কারণ বাংলাদেশ যত জ্বালানি তেল আমদানি করে, তার ৭০ শতাংশই পরিশোধিত তেল।
এই ফর্মুলা প্রণয়নে ভারতের জ্বালানি তেলের দরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে জ্বালানি তেলের চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশে তেলের দাম ভারতের বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হবে।
জ্বালানি তেলের ভোক্তা পর্যায়ে দাম নির্ধারণে কিছুটা মুনাফা যুক্ত করার কারণ সম্পর্কে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সরকার বেসরকারি খাতে রিফাইনারি স্থাপন ও জ্বালানি তেল বিপণন নীতিমালা করছে।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য, জ্বালানি তেলের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা এবং সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতের জ্বালানি তেল একই মূল্যে বিক্রি করা।
বেসরকারি খাত রিফাইনারী এবং জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতের জ্বালানি তেল একই মূল্যে বিক্রি হবে।
মূল্য নির্ধারণের সময় বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য মুনাফা নির্ধারণ করে মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে আরও দক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক জ্বালানি বাজার থেকে সরকারও উপকৃত হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ গত বছরের ৩০ আগস্ট সরকার নির্বাহী আদেশে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, প্রতি লিটার পেট্রোল ১২৫ টাকা ও প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ওঠানামা হলেও সরকার দাম পরিবর্তন করেনি। যদিও সৌদি আরামকোর ঘোষিত ভোক্তামূল্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করছে।