ঢাকা-১৯: ক্ষমতার বাইরে থেকেও ১৫ বছরে মুরাদের আয় বেড়েছে ৪৬ গুণ
২০০৮ সালে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসন থেকে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ার পর দীর্ঘ এক দশক ক্ষমতার বাইরে থাকা সত্বেও ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের বাৎসরিক আয় ও সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে তার দাখিলকৃত হলফনামা ও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকা ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তার দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে সর্বশেষ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
তবে পরবর্তী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় মধ্যবর্তী সময়ে তার কোন হলফনামা পাওয়া যায়নি। যার কারণে এই প্রার্থীর আয় ও সম্পদ ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদে থাকাকালীন সময়ে বেড়েছে নাকি পরবর্তী সময়ে বেড়েছে সেটি সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
এর আগে ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই প্রার্থীর সর্বমোট বাৎসরিক আয় ছিলো মাত্র ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৯ টাকা। সম্প্রতি তার দাখিলকৃত হলফনামায় এই প্রার্থী উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে তার বাৎসরিক আয় সর্বমোট ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৬ টাকা, যা প্রায় ৪৬ গুণ।
যার মধ্যে কৃষিখাতে তার আয় উল্লেখ করেছেন ৭ হাজার টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৪ টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, এফডিআর থেকে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬২ টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
যার মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আসতো ব্যবসা থেকে ও বাকিটা সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর থেকে।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের পর থেকে তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে অন্তত ৬ গুণ।
২০০৮ সালের তার হলফনামায় টাকার অংকে তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিলো ১ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার ৬৬১ টাকা, যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯১ টাকায়।
৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দাখিলকৃত হলফনামায় নগদ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিলো ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৯ টাকা, ব্যাংকে জমা ছিলো ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮২ টাকা, তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ছিলো ৬ লাখ টাকার, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিলো ২৫ লাখ টাকা, ২টি গাড়ি ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের, স্বর্ণালংকার ছিলো ২০ ভরি যা অর্জনকালীন মূল্য ছিলো ৮০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ছিলো ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের।
সেসময় তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিলো ৭ লক্ষ টাকা মূল্যের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী। নির্ভরশীলদের নামে স্বর্ণালংকার ছিলো ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার যার মূল্য দেখানো ছিলো ৬ লক্ষ টাকা।
বিপরীতে বর্তমান সময়ে এসে এই প্রার্থীর অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯১ টাকায়।
যার মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণ ৩১ লক্ষ ২১ হাজার ১৪১ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ কোটি ১৭ লক্ষ ৪ হাজার ১৫৮ টাকা, এফডিআর রয়েছে ৪৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৪২ টাকা, সঞ্চয়পত্র/ স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ২০ লক্ষ টাকা, ২টি গাড়ি রয়েছে ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮৫০ টাকা মূল্যের, ৮০ হাজার টাকার ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার।
এছাড়াও বর্তমানে তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ৭৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭৭০ টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ১২ লাখ ২৬ হাজার ৭৬২ টাকা, ৭.৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২.৭০ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র।
বর্তমান সময়ে এই প্রার্থীর স্থাবর সম্পদ বেড়ে কৃষিজমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ বিঘা বা ১৩.২ একরে যার মূল্য দেখানো রয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৬ টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে ১৫ কাঠা যার মূল্য ৪৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৫০ টাকা, একটি মার্কেট যার মূল্য ৯৪ লক্ষ ৭৯২৬ টাকা, দুটি ফ্যাক্টরি শেড যার মূল্য ৩৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৭ টাকা, ৭টি ফ্ল্যাট যার মূল্য উল্লেখ রয়েছে ১ কোটি ১৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা।
বর্তমানে তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ হিসাবে ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ৯০০ টাকার ৪টি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ রয়েছে হলফনামায়।
এর আগে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের স্থাবর সম্পদের উল্লেখ ছিলো শুধুমাত্র ৮৬ হাজার টাকা মূল্যের ১.৭২ একর কৃষিজমি ও ৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা মূল্যের মোট ৫.৬১ একর অকৃষি জমি।
তবে ২০০৮ সালে তার দাখিলকৃত হলফনামায় কোন দায়ের কথা উল্লেখ না থাকলেও সম্প্রতি দাখিলকৃত হলফনামায় তার দায় উল্লেখ করা হয়েছে ৫০ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭৬৩ টাকা।