মার্চ পর্যন্ত আরও আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন: ট্যারিফ কমিশন
আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলেও আগামী মার্চ পর্যন্ত সময়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে অতিরিক্ত ২ লাখ ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে একথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে দ্রুত আমদানির জন্য সরকারকে বড় বড় কর্পোরেট গ্রুপের সহযোগিতা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে ব্যাংক সুদের হার ও এলসি মার্জিন পুনর্নিধারণের সুপারিশও করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া কমিশনের এই প্রতিবেদনে মূলত বর্তমান পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিরসনে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিকল্প আমদানি উৎস হতে পারে– মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও মালয়েশিয়া। এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে দেশগুলোর কমার্শিয়াল কাউন্সেলররা যেন বাংলাদেশের স্থানীয় আমদানিকারদের সহায়তা করতে পারেন– তেমন পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম-ও বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির দাবি করেছেন। সেক্ষেত্রে এফবিসিসিআই সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও গণমাধ্যমকে জানান তিনি।
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, পেঁয়াজের সংগ্রহ মৌসুম মূলত মার্চ থেকে এপ্রিল। মূল উৎপাদন মৌসুম শুরু হতে এখনো প্রায় সাড়ে তিন মাস বাকি। এই সময়ে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের উৎপাদন শুরু হলেও– বিদ্যমান মজুদ বিবেচনায় মূল উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত ২ লাখ ৫০ হাজার লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে যখন ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় উঠেছিল, তখন ভোগ্যপণ্যের বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে নামমাত্র মুনাফায় বাজারজাত করে। তখনও একইভাবে তাদের সহযোগিতায় পেঁয়াজ আমদানি করার পরামর্শ দেয় কমিশন।
এজন্য অবশ্য পেঁয়াজ আমদানিতে আরোপিত ৫ শতাংশ কাষ্টমস শুল্কসহ মোট ১০ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
তবে কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৭ থেকে ২৮ লাখ মে. টন। যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থানীয় উৎপাদন ৩৩ লাখ ৯০ হাজার মে টন। এরমধ্যে ২৫ শতাংশ ফসল সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষতি বাদে মূল উৎপাদন দাঁড়ায় ২৫ লাখ ৪৯ হাজার টনে। একইসঙ্গে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ৫৬ হাজার টন বেশি।
সব মিলিয়ে সরবরাহ লাইনে মোট ৩০ লাখ ৭৫ হাজার মে. টন পেঁয়াজ যুক্ত হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। তারপরও স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও পর্যবেক্ষণে তুলে এনেছে কমিশন।
গত ৭ ডিসেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। দেশটিতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। দেশটির এই ঘোষণার পর পরই রাতারাতি বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ১২০ থেকে ১৩০ টাকার দেশি পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হতে থাকে। ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার তদারকির পরও বাজারে দাম কমছে না।
এ অবস্থায় কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, মৌসুম পরবর্তী সময়ে পেঁয়াজে মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ার বিষয়টি মূল্য বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ টিবিএসকে বলেন, '(ভারতের) রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার আগেই ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে । এই পেঁয়াজ যাতে দেশে আসে সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। একইসঙ্গে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'দু-চার জন ব্যবসায়ী যখন কোন সমস্যা করে তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু, যখন সারাদেশে সবাই একসঙ্গে এই ধরনের (পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা) অবস্থা তৈরি করে তখন তাদের বিরুদ্ধে খুব বেশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে না।'
তিনি জানান, আগাম জাতের মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। মূল মৌসুমের আগে এখন থেকে হয়তো ৬ লাখ টনের মত পেঁয়াজ সরবরাহ চক্রে আসবে।
ঢাকার বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে আজ সোমবার যৌক্তিক মূল্যে অর্থাৎ ১২০ থেকে ১২৫ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
এদিন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলার আমদানিকারকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ অনুরোধ জানান।