জানুয়ারিতে পুরোদমে চালু হবে মেট্রোরেল, পেছাবে এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ণাঙ্গ চালু হওয়া
ঢাকার দুই মেগাপ্রকল্প উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্ধোধন হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। তবে সব স্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন এখনও চালু করা যায়নি। অন্যদিকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ২৪.২৩ কিলোমিটার নির্মাণে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে—যার ফলে এক্সপ্রেসওয়েটি পুরোদমে চালু হতে বিলম্ব হতে পারে।
বহুল আলোচিত মেট্রো রেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সেপ্টেম্বর থেকে গত চার মাসে আংশিকভাবে খোলা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোরেলের মোট স্টেশন ১৭টি। এর মধ্যে শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার স্টেশনের নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। অন্যদিকে এখনও অবকাঠামো কাজের বড় অংশ বাকি থাকায় আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়েও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি চালু হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক অবশ্য আগামী বছরের শুরুতেই মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হবে বলে আশা করছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের টিএসসি ও বিজয় সরণী স্টেশন দুটো চালু করে সিদ্দিক বলেছিলেন, তাদের লক্ষ্য ডিসেম্বরের মধ্যেই যেসব স্টেশন বাকি রয়েছে, সেগুলো খুলে দিয়ে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পুরো অংশ চালু করার।
মেট্রোরেল পূর্ণাঙ্গ চালু হলে চলাচলের সময়ও বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, 'অবশ্যই আমাদের ইচ্ছে আছে পুরোপুরি মেট্রোরেল চালু হলে সময়ও বাড়ানো হবে। তখন রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আর যাদের পাস আছে তারা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চড়তে পারবেন।'
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে অভ্যন্তরীণ ডেকোরেশন ও সিঁড়ির কাজ করছেন শ্রমিকরা। মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে আগেই।
বর্তমানে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে মেট্রো চলছে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। আর উত্তরা-মতিঝিল পথে চলছে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে এ সময় বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে ডিটিএমসিএল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন।
ভূমি জটিলতায় চ্যালেঞ্জে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ
আংশিক চালু হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শতভাগ কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও ভূমিসহ বিভিন্ন জটিলতায় প্রকল্পের কাজে গতি কমেছে।
প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের ৭৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এর আগে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ছিল ৭০ শতাংশ। এ হিসাবে গত তিন মাসে মাত্র ৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত দিন-রাত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। তবে মালিবাগ থেকে খিলগাঁও রেলগেট পর্যন্ত রেললাইনের পাশের অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজ তিন মাস আগে শেষ হলেও এ অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।
প্রকল্পটির মূল লাইনের প্রায় পুরোটাই রেললাইন ধরে নির্মাণ করা হলেও এই অংশে ভবিষ্যতে আরও চারটি রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকায় জটিলতায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশের কয়েকটি পিলার অতীশ দীপঙ্কর রোডে স্থাপন করতে চাইলেও আপত্তি জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
আবার মগবাজার রেলগেট থেকে কাঁটাবন হয়ে পলাশী পর্যন্ত একটি লিংক লাইন নির্মাণে কারওয়ান বাজার এলাকায় লেক ভরাটের কাজ শেষ হলেও পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি। তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় দেখা গেছে, পিলার স্থাপনের কাজ বেশ কয়েক মাস আগে শেষ হলেও গার্ডার স্থাপনের কাজে এ অংশে কোনো অগ্রগতি নেই।
বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে ১৯.৭৩ কিলোমিটার মূল লাইন ও ২৭ কিলোমিটার র্যাম্প মিলে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করা কঠিন হবে বলে মনে করেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন।
তিনি বলেন, 'বেশ কিছু জায়গায় অ্যালাইনমেন্টে সমস্যা ছিল। এর মধ্যে রেলওয়ের সাথে সমস্যার সমাধান হয়েছে। সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে।
'জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা কঠিন হবে। তবে এ লক্ষ্যটা সামনে রেখেই কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।'
গত ২ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ২২.৫ কিলোমিটার অংশ উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দফায় মূল লাইনের ১১.৫ কিলোমিটার এবং র্যাম্প অংশের ১১ কিলোমিটার উদ্বোধন করা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ৮.২৩ কিলোমিটার মূল লাইন এবং ১৬ কিলোমিটার র্যাম্প ও সংযোগ লাইন মিলে মোট ২৪.২৩ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে।
এই লক্ষ্য পূরণ কতটা সম্ভব, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুল হক টিবিএসকে বলেন, 'কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলে আর নিষ্কণ্টক জমি পাওয়া গেলে এই লক্ষ্য পূরণ হয়তো সম্ভব ছিল।'
তবে এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিনিয়োগকারীর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সদিচ্ছা দরকার। তা না হলে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।