২০২৬ অর্থবছরে শুরু হবে এমআরটি-১ এর মূল নির্মাণকাজ; ৮,৬৩১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
পুরোদমে নির্মাণকাজ চালিয়ে যেতে, আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) মেট্রোরেলের বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত এমআরটি-১ লাইন নির্মাণে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮,৬৩১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ– যা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মেট্রোরেল বা এমআরটি-১ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩,৫৯৪.৩৭ কোটি টাকা– যা সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে ২,১২৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত এমআরটি-১ লাইনের মূল নির্মাণকাজ আগামী অর্থবছরে শুরু হবে। ফলে এ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এমআরটি-১ প্রকল্পের ১২টি প্যাকেজের মধ্যে ১১টির দরপত্রের কাজ শেষ; আর একটা প্যাকেজের দরপত্রের কাজ আগামী সপ্তাহে হয়ে যাবে।"
তিনি বলেন, "৮৮.৭১ একর ভূমিতে নির্মিতব্য এমআরটি লাইন-১ এর ডিপোর ভূমি উন্নয়নের জন্য কাজ ইতোমধ্যে ৮৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে অর্থ ব্যয়ের চাহিদা বাড়বে।"
যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে যে চাহিদা দেওয়া হয়েছে, তারচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়লেও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ৪০.৮৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৫৩,৯৭৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাপান ঋণ দিচ্ছে ৩৯,৪৫০ কোটি টাকা।
গত ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এমআরটি-১ প্রকল্পের বরাদ্দ ১৪০ শতাংশ এবং চলতি সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ৩০৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এই প্রকল্পসহ মেট্রোরেলের চলমান তিন প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে ১১,৪৬৯.৫২ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একটি সমীক্ষা প্রকল্প এবং চলমান তিনটি প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ৬,৬০৫.৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ৭২.৮৩ শতাংশ কমিয়ে ৪,৮২২.১২ কোটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এমআরটি-১ ছাড়াও বর্তমানে এমআরটির চলমান অন্য দুটি প্রকল্প– এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা-কমালপুর) এবং এমআরটি লাইন-৫ নর্দান (হেমায়েতপুর-মিরপুর ১০-ভাটারা) প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া, এমআরটি লাইন-৫ সাউদান প্রকল্পের সমীক্ষা চলমান রয়েছে– যা চলতি অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, এমরাটি-১ প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯.৮৭২ কিলোমিটার পাতাল মেট্রোরেল লাইন এবং নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত ১১.৩৬৯ কিলোমিটার উড়াল মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ হবে।
এই রুটে পাতাল স্টেশন হবে ১৪টি এবং ৭টি উড়াল স্টেশন থাকবে। বিমানবন্দর রুটেই বাংলাদেশের প্রথম পাতাল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়।
২০২৬ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ডিএমটিএল বলেছে, এই সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। কারণ পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে ৬০ মাসের চুক্তি থাকবে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে হিসাব করলে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ করতেই ২০২৯ সাল লেগে যাবে।
এদিকে, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল এবং কমলাপুর পর্যন্ত লাইন-৬ সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এই প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে ১,৯৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ১,২৩৮ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এই প্রকল্পে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১,৩৪৭ কোটি টাকা। ৩,৩৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে জাপান ঋণ দিচ্ছে ১৯,৭১৮ কোটি টাকা।
এদিকে, হেমায়েতপুর-মিরপুর ১০-ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান) প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে ১,৪৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ্ই প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৯৬৮ কোটি টাকা এবং এই বরাদ্দ সংশোধিত এডিপিতে অপরিবর্তীত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত এবং নতুন বাজার থেকে ভাটার পর্যন্ত ৬.৫ কিলেমিটার উড়াল এবং আমিনবাজার থেকে নতুন বাজারের ট্রানজিশন পর্যন্ত ১৩.৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত মোট ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এই লাইনটি।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ১০টি প্যাকেজের দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১,২৩৮ কোটি টাকা– যার মধ্যে জাপান ঋণ হিসাবে দিচ্ছে ২৯,১১৭ কোটি টাকা।