“আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেই”: ৪০ দিন পরে জনসম্মুখে এসে বললেন জিএম কাদের
দীর্ঘ ৪০ দিন পরে আজ শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) জনসম্মুখে এসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, "আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানো ঝুঁকি এই মুহূর্তে নেই।"
এর আগে সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেছিলেন জি এম কাদের। এরপরে তিনি দলের কোনও বিষয়ে কথা বলেননি সাংবাদিকদের সাথে। এতদিন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা, ইশতেহার ঘোষণাসহ সকল বিষয়ে কথা বলেছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
জি এম কাদের শনিবার রংপুরে তার নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে জনসম্মুখে কথা বলেন।
নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৩ আসনে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত নির্বাচনী কর্মী সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, "নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকতে হয়, না হলে ভালো নির্বাচন হয় না। তবে এটার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আমাদের হাতে ছিল না। জাতীয় পার্টি এখন কোনো দোটানার মধ্যে নেই। আশা ও আগ্রহ নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। আমরা আশাবাদী হতে চাই।"
জি এম কাদের বলেন, আমাদের একটা ধারণা, আর যাই হোক আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানোর কোনো ঝুঁকি নেই। কাজেই আমাদেরকে, জনগণকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবেন। এখন জনগণ অংশগ্রহণ করবে কিনা– সেটা তাদের বিষয়।
"জাতীয় পার্টির রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য নির্বাচনে এসেছে" উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা যদি মনে করি সেটা কার্যকর হচ্ছে না, আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না, তখন আমরা আমাদের পার্টির ফোরামে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
জিএম কাদের বলেন, আমরা পার্লামেন্টে থাকার জন্য নির্বাচন করছি। আমরা কোনো (আসন) ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন করছি না। এই নির্বাচন মহাজোটের নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই ধরনের কোনো চুক্তিও করিনি।
যদিও জিএম কাদের ১৪ নভেম্বর বলেছিলেন, "নির্বাচনে গেলে স্যাংশন আসারও সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় যদি আমরা নির্বাচনে যাই, আর যদি পরবর্তীতে সরকার সমস্যায় পড়ে, তাহলে কী হবে?"
কর্মীসভায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর-৩ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এস এম ইয়াসিরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পার্টির কো-চেয়ারম্যান রংপুর মহানগর ও জেলার সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, জেলার সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্যরা।
এর আগে জিএম কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রংপুর নগরীর পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন। পরে তিনি মুন্সিপাড়া কবরস্থানে তার মা-বাবার কবর এবং কেরামতিয়া জামে মসজিদে মাওলানা কেরামত আলী (রহ.) জৈনপুরীর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন।
রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (লাঙল) ছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক (ডাব), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সহিদুল ইসলাম (মশাল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম (আম) এবং তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় জিএম কাদের:
এদিকে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ উঠেছে। গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়াও সরকারী প্রটোকল ব্যাবহার করার জন্য প্রশাসনকে চিঠি দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে রংপুরে তোলপাড় চলছে। যদিও চিঠি দিয়েও তিনি সরকারি প্রটোকল গ্রহণ করেননি।
রংপুর জেলা প্রশাসন ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর সফরসূচি তার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে জিএম কাদের নভোএয়ার বিমানে করে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে অবতরণ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ ছিল।
জিএম কাদের নিজেই শনিবার দুপুরে নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে স্বীকার করেছেন, ওইভাবে সফরসূচি দেয়া সঠিক ছিল না। সে কারণে তিনি বিমান যোগে না এসে শুক্রবার রাতেই সড়কপথে রংপুরে আসেন। এসময় তিনি সরকারি কোনো প্রটোকল ব্যবহার করেননি।
তবে শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় নগরীর দর্শনা এলাকায় প্রয়াত এরশাদের কবর জিয়ারত করতে মোটর শোভাযাত্রাসহ আসার সময়ে তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগানো ছিল না। কিন্তু, কবর জিয়ারত শেষে তিনি গাড়িতে ওঠার আগে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে দেয়া হয়। ওই ভাবেই জাতীয় পতাকা লাগানো গাড়িতে চড়েই তিনি প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসেন।
এরপর দেড় ঘন্টারও বেশি সময় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানকালীন জাতীয় পতাকা লাগানোই ছিল তার গাড়িতে। মতবিনিময় সভাশেষে পায়ে হেঁটে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে গণসংযোগ করতে করতে তিনি রংপুর নগরীর নিউ সেনপাড়াস্থ বাসভবনে যান। পরে তাঁকে ছাড়াই জাতীয় পতাকা লাগানো গাড়িটি তাঁর বাসায় যায়।
এবিষয়ে জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, কিছু গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের খবর বেরিয়েছে, যা সঠিক নয়।
তিনি জানান, বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন তিনি। এজন্য এখনও তিনি মাসিক ভাতা পান, সেটা দিয়ে তার খাবারসহ অন্যান্য খরচ চলে। তাছাড়া সংসদ তো বিলুপ্ত হয়নি। এখনো বহাল আছে, ফলে অনেক কথা কোন কারণ ছাড়াই বলা হচ্ছে।
তবে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসা - এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি।