আওয়ামী লীগ এমপিকে নিয়ে বিনা মূল্যে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখেছেন টিউলিপ
২০১৯ সালে টিউলিপ ও তার ভাই-বোনেরা মিলে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিনামূল্যে দুটি ম্যাচ উপভোগ করেছেন। সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদও।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে।
সরকারি নথিপত্রের বরাতে টেলিগ্রাফ জানায়, ২০১৯ বিশ্বকাপের দুটি ক্রিকেট ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে দেখেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। দুপুরের খাবারসহ প্রতিটি ম্যাচের টিকিটের দাম ছিল ৩৫৮ দশমিক ৮০ পাউন্ড।
ওভাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫ জুন বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ এবং পরবর্তী মাসে লর্ডসে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ ও তার সঙ্গীরা।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজী নাবিল আহমেদসহ আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে বলে দ্য টেলিগ্রাফকে জানিয়েছে সংস্থাটির এক মুখপাত্র। এই সাবেক রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ ও স্বর্ণ পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন নাবিল আহমেদ। ৫ আগস্টের পর তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে শোনা যায়।
টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে শেখ হাসিনা সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করলেও দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন লেবার পার্টির নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের হয়ে প্রচারণায় অংশ নেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
গত বছরের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ফুল নিয়ে টিউলিপের উত্তর লন্ডনের বাড়িতে তাকে অভিনন্দন জানাতে উপস্থিত হন। ওই বাড়িটির মালিক আবদুল করিম, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
লেবার পার্টির সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার কারণে টিউলিপ সিদ্দিক সেখানে থাকেন। এমনকি তার কিছু প্রতিবেশীও জানতেন না তিনি সেখানে বাস করেন।
আওয়ামী যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ আয়াস নিজেই টিউলিপের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন এবং তাকে ফুল উপহার দেন। পরে ফেসবুকে সেই পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়, যখন টেলিগ্রাফ লেবার পার্টির কাছে জানতে চায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা কীভাবে তার ঠিকানা জানতে পারলেন।
লেবার সূত্রে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে যারা টিউলিপকে চেনেন তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে, তবে এতে টিউলিপ সিদ্দিকের কোনো ভুল নেই।
টেলিগ্রাফ আরও জানিয়েছে, ২০২১ সালে ব্রাইটনে লেবার পার্টির সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত আবদুল শাহিদ শেখ, যুবলীগ সদস্য মোহাম্মদ আয়াস এবং সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এ বিষয়ে লেবার পার্টির মুখপাত্র বলেছেন, এটি একেবারেই অযৌক্তিক দাবি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ এই ধরনের সম্মেলনে অংশ নেয়, যেটি বৈধ রাজনৈতিক বিতর্ক ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্র। এই সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিদের ভিন্নমতকে লেবার পার্টির অবস্থান বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী নেতা কেমি ব্যাডেনক।
ব্যাডেনক বলেন, কিয়ার স্টারমারের উচিত টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করা। তিনি তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, অথচ এখন তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ সরকারও তার শেখ হাসিনা সরকারের সাথে সংযোগ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
টিউলিপের দুর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যের পরই কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনোচ এই মন্তব্য করেন।
'দ্য সানডে টাইমস'-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে যে সম্পত্তিগুলো ব্যবহার করেছেন সেগুলো তদন্ত করা উচিত এবং সেগুলো যদি 'সরল ডাকাতি'র মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে তবে তার সরকারকে ফেরত দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'তিনি দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হয়ে নিজেকে রক্ষা করছেন। হয়তো তখন বুঝতে পারেননি, কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন। আপনার উচিত বলা, "আমি তখন বিষয়টি বুঝিনি, এজন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি এবং পদত্যাগ করছি।" কিন্তু তিনি তা করছেন না, নিজেকে রক্ষা করছেন।'
লন্ডনে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সাথে সম্পৃক্ত সম্পত্তি ব্যবহারের খবর প্রকাশের পর টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
স্যার লরিকে পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার কোনো ভুল হয়নি।