পার্বত্য চট্টগ্রামে সোয়াইন ফ্লু, বাংলাদেশ থেকে তাইওয়ানে শূকরের মাংস নিয়ে গেলে জরিমানা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার (এএসএফ)। এ ঘটনার পর তাইওয়ানে বাংলাদেশি শূকরের মাংস প্রবেশ করলে ২,০০,০০০ নিউ তাইওয়ানিজ ডলার জরিমানা ঘোষণা করেছে তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (সিইওসি)।
গত ২১ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি জেলার সদর উপজেলার মানিকছড়ি এলাকায় একটি শূকর খামারে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার আক্রান্ত হয়ে শূকরের মৃত্যুর ঘটনার পর সিইওসি এ নির্দেশনা দেয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংস রপ্তানি করা হয় না। পার্বত্য অঞ্চলসহ কিছু পাহাড়ী অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী তাদের নিজেদের ভোগ চাহিদার জন্য শূকর পালন করে। তাই বাংলাদেশ থেকে এই প্রাণির মাংস বৈধভাবে রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী ভারত এবং মিয়ানমার দিয়ে দুটি দেশের জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে শূকরের মাংস বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুর্গম পাহাড়ী এলাকা বিশেষ করে মিজোরাম অঞ্চলে সীমান্তে তেমন নজরদারী থাকে না। তাই সীমান্তবর্তী এই পথে অবৈধভাবে শূকরের মাংস পাচার হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তাইওয়ান-ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ফোকাস তাইওয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভারের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এতে সেখানকার একটি খামারের ৪১৪টির মধ্যে ২৭৪টি শূকর এ রোগে আক্রান্ত। মারা গেছে প্রায় ২২৭টি।
সিইওসি বলছে, বাংলাদেশে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভারের এটিই প্রথম ঘটনা। এরমানে এশিয়ায় এই রোগের বিস্তার এখনও ঘটছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. এ. কে.এম হুমায়ুন কবির টিবিএসকে বলেন, "কোনো খামারে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার আক্রান্ত হলে শূকরের মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ। গত নভেম্বর থেকে একটি খামারে এএসএফ আক্রান্ত হয়ে একে একে মারা যাচ্ছে শূকরগুলো।"
গত ১ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটির মানিকছড়ি এলাকায় একটি শূকরের খামারে এএসএফ'র প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। সেই খামারে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।
এএসএফ অত্যন্ত সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী একটি ভাইরাস। সব বয়সী গৃহপালিত ও বন্য শূকরের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই ভাইরাস হুমকি নয় এবং শূকর থেকে মানুষের শরীরেও এর সংক্রমণ হয় না। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হুমকি নয় এই ভাইরাস।
যদিও গত ২১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশকে এএসএফ মুক্ত বলে বিবেচনা করা হতো। বাংলাদেশ থেকে শূকর এবং শূকরের মাংস রপ্তানির অনুমতিও নেই। যে কারণে আগের নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংসের পণ্য আমদানি করা হলে ৩০,০০০ নিউ তাইওয়ানিজ ডলার জরিমানা করতো তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার।
তাইওয়ানের প্রাণী ও উদ্ভিদ স্বাস্থ্য পরিদর্শন সংস্থার (এপিএইচআইএ)-এর ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল হু জং-পিন বলেন, ২০১৮ সালে চীনে এএসএফ'র প্রাদুর্ভাবের পর থেকে পূর্ব এশিয়ায় এখন কেবল তাইওয়ান এবং জাপানই এএসএফ-মুক্ত দেশ।
ফোকাস তাইওয়ানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে তাইওয়ানের আকাশপথে সরাসরি কোনো ফ্লাইট না থাকলেও বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংসের আমদানি ঠেকাতে এপিএইচআইএ বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।
এতে এপিএইচআইএর চারটি শাখার পাশাপাশি তাইওয়ানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের শুল্ক প্রশাসন এবং ওশান অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের কোস্ট গার্ড প্রশাসনকে কোয়ারেন্টাইন বৃদ্ধি এবং তদন্ত জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।