২০২৩ সালে ঢাকাবাসী মাত্র ৮ দিন ‘ভালো’ বাতাসে শ্বাস নিয়েছে
নতুন বছরের প্রথম দিনেও বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল ঢাকা। এদিন ঢাকার বাতাসের মান ছিল 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে, বন্ধ করে দেওয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বায়ুদূষণের কারণে এক দিনের জন্যও সতর্কতা জারি করা হয়নি। কারণ খারাপ বাতাসের মান এদেশে নতুন কিছু নয়।
২০২৩ সালে ঢাকাবাসী মাত্র আট দিন 'ভালো' বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়েছে। তবে ২০২২ সালের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কারণ ২০২২ সালে ঢাকার বাতাসের মান মাত্র একদিন 'ভালো' ছিল।
সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক পলিউশন স্টাডিজের (সিএপিএস) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাতাসের মান আট দিন 'ভালো' পর্যায়ে থাকলেও ২০২৩ সাল বাংলাদেশের জন্য গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের বছর।
২০২৩ সালে বার্ষিক গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ১৭১, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৫.২০% বেড়েছে। এক্ষেত্রে একিউআই যত কম হবে, বাতাসের গুণগত মান তত ভালো হবে।
বাতাসের মান ০-৫০ এর মধ্যে থাকলে ভালো, ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকলে 'মধ্যম' বা 'গ্রহণযোগ্য' এবং ১০১ থেকে ১৫০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে ধরা হয়।
আর বাতাসের মান ৩০০ অতিক্রম করলে তাকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ অবস্থায় বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
সিএপিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পুরো আট বছরের মধ্যে মাত্র ৪৭ দিন ঢাকার বাসিন্দারা 'ভালো' বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়েছে। ২০২৩ সালে ১৩ দিন ঢাকার বাতাস ছিল 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর' বা 'বিপজ্জনক', যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সিএপিএস বাংলাদেশের আমেরিকান দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে ঢাকার একিউআই ডেটা বিশ্লেষণ করেছে। ২০২৩ সালে একটি উল্লেখযোগ্য সময় বাতাসের মান অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে ছিল। এই সময়ের মধ্যে ঢাকাবাসী ৫৫ দিন ধরে 'বিপজ্জনক' বাতাস, ৫৪১ দিন 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর' বাতাস এবং ৭৭৮ দিন 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' বাতাস অনুভব করেছেন।
সিএপিএসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণ সামগ্রী রেখে দীর্ঘমেয়াদী সড়ক নির্মাণকাজ এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও যানজট বৃদ্ধি বায়ু দূষণের মূল কারণ। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন সড়কে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দূষণের আরেকটি কারণ।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এগুলো দূষণের মাত্রা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। বায়ু দূষণ কমানোর জন্য নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে এই কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
দৈনন্দিন বায়ুর গুণমান রিপোর্ট করার জন্য একটি সূচক হলো একিউআই। এটি জানায় একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটা পরিষ্কার বা দূষিত এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো কতটা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশে একিউআই পাঁচটি দূষণকারীর ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে তৈরি: পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫), এনও ২, সিও, এসও ২ ও ওজোন। অস্বাস্থ্যকর বাতাসে (২০১-৩০০) হার্ট ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের কোনোভাবেই ঘরের বাইরে অবস্থান করা উচিৎ নয়।
নিঃশ্বাস নেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ছে
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২১ ও ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি দূষণ লক্ষ্য করা যায়; যার ধারাবাহিকতা ২০২৩ সালেও পরিলক্ষিত হয়।
২০২১ সালের বার্ষিক একিউআই ছিল ১৫৯ এবং ২০২২ সালে ছিল ১৬৩। যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৭১। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম বার্ষিক গড় বায়ুমান সূচক পাওয়া যায় ২০১৭ ও ২০২০ সালে, যা যথাক্রমে ১৪৬ ও ১৪৩।
২০২০ সালে লকডাউনের কারণে বায়ু দূষণের উৎসগুলো বন্ধ থাকায় দূষণের পরিমাণ কম দেখা যায়। এ সময় বার্ষিক গড় বাতাসের মান ছিল ১৪৩। পর্যবেক্ষণ থেকে আরও দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ২০২২ সাল ছাড়া প্রতি বছরই জানুয়ারি মাসে (২৪৮) সর্বোচ্চ গড় বায়ুমান সূচক ছিল এবং সর্বনিম্ন মানগুলো পাওয়া যায় জুলাই (৮৯) ও আগস্ট (৯৮) মাসের দিকে।
১ জানুয়ারি রাতে ২৮১ একিউআই স্কোর নিয়ে ১১০ টি দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকা ফের বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বাতাসের শহরের স্থান দখল করেছে। ঢাকার পরেই রয়েছে ভারতের দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোর ও চীনের শেনইয়াং, যেগুলোর একিউআই স্কোর যথাক্রমে ২৬৫, ২১৭ ও ২০৭।
হাইকোর্ট ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বায়ু দূষণের উৎস চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিলেও এসব নির্দেশ অনেকটাই উপেক্ষিত। এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তর সভা করেছে এবং লিফলেট বিতরণ করেছে। তবে ২০২২ সালের নভেম্বরে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় কমিটি এ বিষয়েকোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেনি।