খালি হাতে নির্বাচনের মাঠ থেকে ফিরল ২৩ দল
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়ার পরও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৩টি দল কোনো আসনেই জিততে পারেনি।
রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ২৩টি দলের মোট প্রার্থী ছিল ৮৯৪ জন।
নির্বাচনে নিজেদের বিরোধী দল হিসেবে ঘোষণা করা তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) কোনো আসনেই জিততে পারেনি।
২৮টি দলের এক হাজার ৫৩৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫টি দলের ৬৩৯ জন প্রার্থী আসন পেয়েছেন।
পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে হেরেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এর আগে সাতবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মঞ্জু এ প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে হারলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ একসময় মঞ্জুর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন।
জাপা (মঞ্জু)-এর জাতীয় নির্বাচনে সাফল্য সাধারণত দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে, বিশেষ করে পিরোজপুর-২ আসনে। ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও জিয়ানগর উপজেলা নিয়ে মঞ্জুর এই নির্বাচনি এলাকাটি গঠিত।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি কেবল একবার — বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলোর বয়কট করা ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে একটির বেশি আসন পেয়েছিল।
এদিকে এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) ১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল; তারা সবাই হেরেছেন।
তৃণমূল বিএনপি 'সোনালী আঁশ' প্রতীক নিয়ে ১৩৫ জন প্রার্থী দেয়। তারা সব সময় নিজেদেরকে নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে দাবি করলেও কোনো প্রার্থী জিততে পারেননি।
দলের চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে হারেন। দলের মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ৫৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও দলটির সব প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। বিএনএমও প্রধান বিরোধী দল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।
আরেকটি নতুন দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) 'একতারা' প্রতীক নিয়ে ৭৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কোনো জয় পায়নি।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩০টি আসনে প্রার্থী দিলেও কোনো আসনে জিততে পারেনি। টাঙ্গাইল-৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের কাছে হেরেছেন দলটির চেয়ারম্যান বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী।
কোনো জয় না পাওয়া অন্য দলগুলো হলো জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, গণফ্রন্ট, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন), গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মুজাফফর), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।
জামানত হারিয়েছেন বেশিরভাগ প্রার্থী
১টি করে আসন জিতেছে ৩টি দল
নির্বাচনে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি আসনে ছাড় দিয়ে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ। তবে কেবল বরিশাল-২ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী ও দলের চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন একটি আসনে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী একে ফয়জুল হককে পরাজিত করেন তিনি।
রাজশাহী-২ আসনে দলের অপর প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমানের কাছে হেরে যান।
আওয়ামী লীগ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) জন্যও ৩টি আসনে ছাড় দেয়। তবে জাসদ মাত্র একটিতে জিততে পেরেছে। বগুড়া-৪ আসনের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হকের বিপক্ষে জয়ী হন।
দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসনে ৩৬ হাজার ৭৩১ ভোট পেয়ে পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামারুল আরেফিন পেয়েছেন ৪১ হাজার ২৯২ ভোট।
এছাড়া লক্ষ্মীপুর-৪-এর প্রার্থী মোশাররফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহর কাছে হেরেছেন।
কক্সবাজার-১ আসনে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম।