ইঞ্জিন সংকটে কমেছে পণ্যবাহী ট্রেন, ব্যাহত হচ্ছে পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন
ইঞ্জিন সংকটের কারণে গত কয়েক মাসে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে। এতে পণ্য পরিবহনে বিশেষ করে আমদানি করা পণ্য, খাদ্যশস্য ও জ্বালানির পরিবহনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, একসময় পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন রুটে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করত। অথচ এখন ট্রেন চলছে পাঁচ থেকে সাতটি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পূর্বাঞ্চলে মোট ১৩৬টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করেছে। অক্টোবরে চলেছে ৯৮টি এবং নভেম্বরে চলেছে ১০১টি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন চালু হওয়া যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো পরিচালনার জন্য পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনগুলো বরাদ্দ করা হচ্ছে। যে কারণে পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা কমছে।
পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এটি রেলওয়ের আয়ের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কারণ, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হলো আমদানি-রপ্তানি পণ্য, সার, জ্বালানি, পাথর, সরকারি ও বেসরকারি শস্য পরিবহন এবং সামরিক পণ্যের পরিবহন।
ইঞ্জিন সংকটের কারণে ট্রেনের সংখ্যা কমেছে জানিয়ে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের প্রধান ইয়ার্ড মাস্টার মো. আব্দুল মালেক টিবিএসকে বলেন, 'স্বাভাবিকভাবে যেখানে পাঁচ-ছয়টি ট্রেন চলে, সেখানে মাত্র চার-পাঁচটি ইঞ্জিন বরাদ্দের কারণে বর্তমানে ট্রেন চলছে দুই থেকে তিনটি।
রেলওয়ের পরিবহন ও যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের মতে, পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে মোট ২০০টি ট্রেন (৫০টি অকার্যকর ট্রেনসহ) চালানোর জন্য ৩০০টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। বর্তমানে ১৯৭টি ইঞ্জিন রয়েছে, যার দুই-তৃতীয়াংশের আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। সে হিসেব ১০০টিরও কম ইঞ্জিন চালু রয়েছে, যেখানে ইঞ্জিনের চাহিদা ১১৬টি।
এটি আরো জানায়, সম্প্রতি দুর্ঘটনার কারণে তিনটি কার্যকর ইঞ্জিন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ঢাকা-নোয়াখালী এবং ঢাকা-সিলেট রুটের পাশাপাশি ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালু করার জন্য আরো ইঞ্জিন বরাদ্দ প্রয়োজন।
কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবহন এবং যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ নতুন ইঞ্জিন সরবরাহ করতে পারছে না। এর প্রভাব পড়ছে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের ওপর। উল্লেখ্য, মাত্র কয়েক মাস আগে পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য নিয়মিতভাবে ১২ থেকে ১৫টি ইঞ্জিন বরাদ্দ করা হয়েছিল।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের মতে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পূর্বাঞ্চলে পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ২১টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন হয়।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি পর্যন্ত প্রতিদিনের পণ্য পরিবহনের জন্য ছয়টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। রংপুর, সিলেট, ঢাকা সেনানিবাস ও শ্রীমঙ্গলে জ্বালানি পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত ছয়টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। দিনাজপুর, রংপুর, সান্তাহার ও তেজগাঁও গুদামে খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্য সর্বনিম্ন তিনটি এবং সর্বোচ্চ সাতটি ইঞ্জিন প্রয়োজন।
এছাড়াও খাদ্যশস্যের অনিয়মিত পরিবহনের জন্য কমপক্ষে তিনটি ইঞ্জিনের প্রয়োজন, যা বর্তমানে নেই।
সামরিক চালান, দেশের বিভিন্ন স্থানে সার, পাথর, আশুগঞ্জে শস্য পরিবহনসহ অনিয়মিত পরিবহনের জন্য প্রতি মাসে কয়েকটি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে। ন্যূনতম ১৫টি ইঞ্জিনের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গত ডিসেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে পণ্য পরিবহন খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮ থেকে ১০টি ইঞ্জিন।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল আলম পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিনের ঘাটতির কথা তুলে ধরে জানান, বেশ কয়েকটি নতুন যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর কারণে পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য ইঞ্জিন বরাদ্দ কমে গেছে।
তিনি বলেন, 'দুর্ঘটনার কারণে তিনটি ইঞ্জিন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পাঁচ থেকে ছয়টি ইঞ্জিন মেরামতের চেষ্টা চলছে।'
এ বিষয়ে রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গত নভেম্বরে তিনি টিবিএসকে বলেছিলেন, ইঞ্জিন সংকট মোকাবিলা করতে আরো তিন বছর সময় লাগতে পারে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ২০টি ধাপে মোট ৮০টি ইঞ্জিন আনার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।