নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সংকটে কমেছে কারখানার উৎপাদন
নারায়ণগঞ্জে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া গ্যাস সংকট গত এক সপ্তাহয় আরও তীব্র হয়েছে। দৈনন্দিন রান্নার গ্যাস সংকটের ভোগান্তির পাশাপাশি শিল্প গ্যাস সংকটের ফলে কারখানাগুলোতে কমে গেছে উৎপাদন।
বাড়তি চাহিদা মোকাবিলায় কারখানা কর্তৃপক্ষ সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) ও এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) কিনে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রোববার (২১ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ শহরের আবাসিক গ্যাস লাইনে চাপ বাড়লেও শিল্প লাইনের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ অবস্থায় বেশকিছু কারখানা তাদের সেকশন বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয়েছে। অনেক কারখানায় কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য এদিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ যেসব শিল্প এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমে গিয়েছে, আগামীকাল নাগাদ সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে।
কলকারখানা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানা। এর মধ্যে নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা দুই হাজার ২০০টির মতো। প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস এসব কারখানা। কিন্তু গ্যাস সংকট, অর্ডার কমে যাওয়ার কারণে শ্রমিক ও মালিক উভয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তাদের কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা রাখা নিয়ে।
বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'নতুন বছরে শ্রমিকদের নতুন স্কেলে বেতন দিতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের। কিন্তু গত বছরের গ্যাস সংকটের ধকল কাটিয়ে না উঠতেই নতুন সংকট ভাবিয়ে তুলছে তাদের। ডলার সংকটের মাঝে ব্যাংক থেকে যখন অর্থ ছাড় করতে বেগ পেতে হচ্ছে, তখন গ্যাস সংকট ও জ্বালানির বাড়তি বোঝা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।'
কারখানার উৎপাদন ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে জানিয়ে ফতুল্লার আইএফএস টেক্সওয়্যারের সিও মোতাহার হোসেন ভুঁইয়া বলেন, 'আমাদের তাও চলছে সিএনজি ও এলপিজি গ্যাস কিনে আনার কারণে। একদিকে নতুন স্কেলে বেতন, অন্যদিকে বাড়তি খরচ। সব মিলিয়ে প্রচুর সমস্যা তৈরি হয়েছে।'
শ্রমিকদের হাতে পর্যাপ্ত কাজ না থাকায় কারখানার কয়েকটি সেকশন বন্ধ রেখেছেন বলেও জানান তিনি। 'রাত ১টার পরে গ্যাসের চাপ কিছুটা বাড়ে। রাতের শিফটে কিছুটা কাজ করা যায়। কিন্তু যেখানে ২৪ ঘণ্টা কাজ করার দরকার, সেখানে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাস পর্যাপ্ত থাকে না।'
'তাছাড়া এখন গ্যাস কিনতে হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে। তারপরও আমরা গ্যাস পাই না,' অভিযোগ করেন তিনি।
ফতুল্লার আরেকটি কারখানা ইউরোটেক্স নীটওয়্যারের সিও শামীম ইসলাম বলেন, 'প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার জ্বালানি কিনে আনতে হচ্ছে। এ টাকা তো আমার উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। অর্ডারও কমে যাচ্ছে দিন দিন।'
বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'আমরা আগেই বলেছি এ সময়ে মজুরিবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হয়নি। এটা হওয়া উচিৎ ছিল ছয়মাস পরে। পুরো শিল্প এখন ভুগছে। কারখানাগুলোর ৫০ শতাংশ কাজ নেই। এর মধ্যে গ্যাস সংকট মালিকদের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
'সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দ্রুত সময়ে গ্যাস সংকটের সমাধান করবেন তারা। আমরা সেই অপেক্ষাতেই আছি,' বলেন তিনি।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বর্তমান গ্যাস সংকট আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কেটে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আমদানি করা এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলএনজি সরবরাহকারী মহেশখালীর দুটি এফএসআরইউ-এর (ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) একটি সার্ভিসিং করে বিদেশ থেকে নিয়ে এসে টার্মিনালে সংযুক্ত করার পর সমস্যা দেখা দেয়।
'আর যে টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল সেটিতে কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।'
তবে বর্তমানে দুটিই চালু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'দু-একদিনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত হবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। আর আমরা সরবরাহ করতে পারছি ৩২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এ কারণে কিছুটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।