দেশে প্রথমবারের মতো রোবোটিক অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সফল অপারেশন
হৃদরোগের চিকিৎসায় 'রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি' যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। গত রোববার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজেস (এনআইসিভিডি) এ প্রথমবারের মতো দেশে দুজন রোগীর শরীরে রোবটের মাধ্যমে স্টেন্ট পরানো হয়েছে।
ঐ দুই রোগী এখন সুস্থ আছেন। গতকাল (বুধবার) তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
প্রায় ২০ বছর ধরে হৃদরোগে ভুগছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের বাসিন্দা আজম আলী (৬৫)। দুই মাস আগে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। তারপর তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় চিকিৎসার জন্য। তবে সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে এনআইসিভিডি-তে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত রোববার তাকে রোবট দিয়ে স্টেন্ট পরানো হয়।
আজম আলীর ছেলে মনিরুল ইসলাম গত বুধবার বিকেলে দ্য বিজেনস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাবা এখন অনেক ভালো আছেন। আমরা বাসে করে কুষ্টিয়া যাচ্ছি। এখন তার আগের সমস্যাগুলো নেই। আমাদের ওষুধ লিখে দেয়া হয়েছে। আর ফলোআপে আসতে হবেনা।"
আজম আলীর সঙ্গে অন্যজন ছিলেন মোর্শেদ আলম (৫০)। চাঁদপুরের এ বাসিন্দা গত সাত বছর ধরে সৌদি আরবের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সৌদি আরবে হৃদরোগ ধরা পড়লেও পরবর্তী চিকিৎসা করাতে ভরসা পাননি। দেশে এসে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আসেন তিনি। চিকিৎসা শেষে আড়াই মাস পরে আবার সৌদি আরবে ফিরে যাবেন।
এনআইসিভিসি সূত্র মতে, মোর্শেদ আলম ও আজম আলীর তিনটি করে ব্লক ছিল। বিনামূল্যে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি করা হয়েছে তাদের। দুজনই হাসপাতাল থেকে একটি করে স্টেন্ট বিনামূল্যে পেয়েছেন।
রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো দুই রোগীর হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট পরান এনআইসিভিডির কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকারের নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।
প্রদীপ কুমার কর্মকার টিবিএস-কে বলেন, "রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি বর্তমানে হার্টের রিং পরানোর সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তি। রোবোক্যাথ আর ওয়ান সিস্টেমে ক্যাথল্যাবে একটি রোবোটিক হাত থাকে। আর দূর থেকে একটি মেশিনে তা নিয়ন্ত্রণ করেন চিকিৎসকেরা। আগে চিকিৎসকেরা সরাসরি নিজের চোখে দেখে নিজের হাতে যে কাজটি করতেন, তাই এখন করা হচ্ছে রোবটের মাধ্যমে। এতে কাজটি অনেক নিখুঁত হচ্ছে। অপারেশনে সময় কম লাগছে। এই দুই রোগীর অপারেশনে সময় লেগেছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট যা সরাসরি করলে লাগত এক ঘণ্টার বেশি।"
"অনেক সময় হার্টের রিং নিখুঁত পজিশনের জন্য এক মিলিমিটার সামনে অথবা এক মিলিমিটার পেছনে নিতে হয়। হাত দিয়ে করলে এ কাজটি করা কঠিন; কিন্তু রোবটের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে করা যায়'' যোগ করেন তিনি।
এনআইসিভিডি-তে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টিটতে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি পরীক্ষামূলকভাবে এক মাস ব্যবহারের জন্য ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে। বাংলাদেশে অবকাঠামোর সঙ্গে এই যন্ত্র সহায়ক কি-না, তা যাছাই–বাছাইয়ের জন্য বিনামূল্যে এটি আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে এক মাসে ১০ জন রোগীকে এ সেবা দেওয়া হবে। তারপর যন্ত্রটি আবার ফ্রান্সে পাঠানো হবে।
ডা প্রদীপ বলেন, ''যদি রোবোটিক পদ্ধতিটি বাংলাদেশের অবকাঠামোর সঙ্গে সহায়ক হয় তাহলে তারা মেশিনটি কিনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবে। এতে দেশে স্থায়ীভাবে রোবোটিক পদ্ধতিতে হার্টের রিং পরানো সম্ভব হবে। তখন রিংয়ের দামের পাশাপাশি রোগীকে বাড়তি মাত্র ২০ হাজার টাকা দিতে হবে এ সার্জারির জন্য।''
''দেশে এ পদ্ধতিতে হার্টের রিং পরানো চালু হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের আর ঢাকায় আসতে হবে না। জেলা পর্যায়ের ক্যাথল্যাবে রোগী থাকবে আর ঢাকা থেকে রোবটের সাহায্যে এনজিওপ্ল্যাস্টি করবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এতে ঢাকায় না এসেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরাও বিশেষজ্ঞ সেবা পাবে'' যোগ করেন তিনি।