চেক প্রতারণা মামলায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর ৬ মাসের কারাদণ্ড
চেক প্রতারণার মামলায় আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান– আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাবিয়া চৌধুরীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন ঢাকার একটি আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মামলাটির বিচার শেষে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ তসরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী নিকুঞ্জ বিহারী আচার্য রায়ের বিষয়টি টিবিএসকে নিশ্চিত করে বলেন, "অন্য মামলায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার কারাগারে রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সাবিয়া চৌধুরী পলাতক থাকায়, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।"
চেক প্রতারণা এই মামলার বাদী নুরুজ্জামান রিপন।
আইনজীবী জানান, নুরুজ্জামান রিপন আলেশা মার্ট লিমিটেড থেকে ছাড়ে একটি ইয়ামাহা ব্রান্ডের মটরসাইকেল কেনার জন্য ২০২১ সালের ৮ জুন অর্ডার করেন। অর্ডারের বিপরীতে দুই লাখ ৫০ হাজার ৩১০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। টাকা পরিশোধের পর নির্ধারিত সময় ৪৫ দিন পার হলেও তিনি মোটরসাইকেল বুঝে পাননি।
এরপর মোটরসাইকেল হস্তান্তরে ব্যর্থ হয়ে বাদীকে ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর মোটরসাইকেলের ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার চেক প্রদান করে আলেশা মার্ট।
পরবর্তী সময়ে বাদী ২০২২ সালের ২০ মার্চ ঢাকার সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল হল শাখায় চেক নগদায়নের জন্য জমা দিলে সেটি ডিজঅনার দেখানো হয়। এরপর ভুক্তভোগী ব্যক্তি একাধিকবার টাকার বিষয়ে আলেশা মার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলে– তারা টাকা না দিয়ে নানান টালবাহানা করতে থাকে। এরপর ২০২২ সালের ১৯ মে তিনি বাদী হয়ে আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে মঞ্জুর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ৯টি মামলায় ওয়ারেন্ট মূলে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরদিন ১৫ জানুয়ারি তিনি এসব মামলায় জামিন পান। অন্য একটি মামলায় জামিন না পাওয়ায়– এখনো কারাগারে রয়েছে মঞ্জুর।
পুলিশ জানায়, মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনেও মামলা আছে। এই মামলার বাদী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে।
সিআইডির দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালের ২৬ জুলাই আলেশা মার্ট যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে আলেশা মার্টের যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি।
'আছি তো আমরা আছি তো' স্লোগান নিয়ে বাজারে আসে প্রতিষ্ঠানটি। যাত্রা শুরুর পর কম দামে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে বহু গ্রাহককে পণ্য না দিয়ে, কিংবা টাকা ফেরত না দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে তারা অর্থপাচার করেছে বলে দাবি সিআইডির।
আলেশা মার্টের প্রতারণার বিষয়ে সিআইডি জানায়, আলেশা মার্টের চারটি বেসরকারি ব্যাংক হিসাব থেকে ৪২১ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩১ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ কেনা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে এই সম্পদ কেনা হয়।