একুশে বইমেলা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীতে বইপ্রেমী ও প্রকাশকদের বার্ষিক অনুষ্ঠান মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন করেন তিনি।
একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত 'কালেক্টেড ওয়ার্কস অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: খণ্ড-২' ও 'প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা' শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতি কর্মদিবসে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল ৮টায় মেলাপ্রেমীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতে পারবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ (বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩) বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
১১টি ক্যাটাগরিতে ১৬ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে পুরস্কারের অর্থের চেক, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
কবিতায় শামীম আজাদ, শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হিসেবে যৌথভাবে ঔপন্যাসিক নূরউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বানী, প্রবন্ধ/গবেষণায় জুলফিকার মতিন, অনুবাদ কর্মে সালেহা চৌধুরী এবং নাটকে অসামান্য কাজের জন্য মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক একুশে পদক পেয়েছেন।
শিশুসাহিত্যে তপঙ্কর চক্রবর্তী, পরিবেশ বা বিজ্ঞান ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পক্ষীবিদ ইনাম আল হক এবং লোকসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তপন বাগচী ও সুমন কুমার এ পুরস্কার পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখালেখির জন্য আফরোজা পারভীন ও আসাদুজ্জামান আসাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর জীবনীগ্রন্থের জন্য সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান এবং আত্মজীবনী বিভাগে কাজের জন্য ইসহাক খান এ পুরস্কার পেয়েছেন।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমেদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বক্তব্য রাখেন।
বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মেলায় ৩৭টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শাখায় ৩৬টি)।
এ বছর মেট্রোরেল স্টেশন চালু হওয়ায় মেলা থেকে বের হওয়ার পথটি কালীমন্দির গেটের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন এলাকায় আটটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে।
খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত এবং এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইমেলায় আসা পাঠকদের কোনো বিড়ম্বনা না হয়। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের প্রার্থনা এলাকা, বিশ্রামাগার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও থাকবে।
প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশু মেলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী "শিশু প্রহর" গত বছরের মতো এবারও মন্দির এলাকাসংলগ্ন পূর্ব পাশে রয়েছে।
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার, এরপর অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লিটল ম্যাগাজিন প্রাঙ্গণটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগ স্টল রয়েছে।
বাংলা একাডেমিতে মেলার নির্ধারিত ভেন্যু ছাড়াও ২০১৩ সালে প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার স্থান বাড়ানো হয়।
অনুষ্ঠানস্থল ও এর আশপাশে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য নিরাপত্তা প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তিন শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো মেলা এলাকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের স্মরণে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিজুড়ে বইমেলার আয়োজন করা হয়।
১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনানুষ্ঠানিকভাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হয় এবং এরপর ১৯৭৮ সালে একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি বছর মেলা আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।