বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার: গণহত্যা ও জনবিরোধী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলে পুরস্কার বাতিল
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের স্থগিত তালিকায় নাম থাকা কারো বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জনবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকলে পুরস্কার বাতিল করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম।
তিনি বলেন, 'সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষণা করা হলে নানা মহল থেকে আলোচনা হয়। এরপর বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে তালিকাটি সাময়িক স্থগিত করেছি। তালিকাটি আমরা রিভিউ করব, যদি কারও বিরুদ্ধে গণঅভ্যুথানে হত্যাকান্ড বা ইন্ধনের অভিযোগ প্রমানিত হয় বা গণবিরোধী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকে বা অপরাধমূলক কোনো কর্মকান্ডে জড়িত থাকে; তাহলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে।'
আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
এসময় তিনি বলেন, 'তার পরিবর্তে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটা যে কমিটি কাজ করছে, সেই কমিটি দেখবে।'
নাম প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাই নিয়ে মোহাম্মদ আজম বলেন, 'আমরা কোন প্রক্রিয়ায় ভুল করতে চাইনি। কিন্তু আসলে আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা পুরো প্রক্রিয়াটি মেইনটেইন করতে চেষ্টা করেছি। এ কারণেই আমরা ৩ কার্যদিবসের জন্য এগুলো সাময়িক স্থগিত করেছি।'
মহাপরিচালক বলেন, 'বাংলা একাডেমির জন্য ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি খুব ব্যস্ত সময়। আমরা একটি বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিটি করতে চাই। যে কমিটিতে বিজ্ঞজনরা সংস্কারের নানা বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিবেন।'
তিনি বলেন, 'যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে আমরা রিভিউ কমিটিতে উঠিয়েছি। কমিটি সেটা বিবেচনা করে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিবেন।'
যাচাই প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, 'গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনি ভিত্তি পায়—এই দুইয়ের সমন্বয়ে এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।'
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা একাডেমির পুরস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গোলমাল ছিল বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, 'পুরো বাংলা একাডেমিকে ঢেলে সাজানো হবে।'
উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলা একাডেমিকে বিশেষ মত ও গ্রুপের লোকের আখড়া বানানো হয়েছিল, নতুন চিন্তা প্রবেশের জায়গায় রাখা হয়নি।'
এর আগে, গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সই করা এক নোটিশে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ এর পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২৪'- এর এক সভা আজ সন্ধ্যা ৬টায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪' এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
'এই অবস্থায় "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪" এর পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিত করা হলো। অনধিক তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি পুনঃপ্রকাশ করা হবে।'
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টেও এবিষয়ে জানান।
পোস্টে তিনি লেখেন, 'বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা প্রয়োজন, যে আজব নীতিমালা এ ধরনের উদ্ভট এবং কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয় সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে- এই সব কিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাব এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়? '
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪' এর জন্য ১০ ক্যাটাগরিতে ১০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়।
তারা হলেন—কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ বা গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান ও ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এ রকম পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।