কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড নিয়ে বিরোধ, উত্তপ্ত ক্যাম্পাস
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের মসজিদের ইমাম নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি অংশ। এনিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।
জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে দফায় দফায় উপাচার্যের সাথে দেখা করেন উপাচার্য-বিরোধী শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। উপাচার্যের কার্যালয়ে আধা-ঘন্টা বাগ্বিতণ্ডাও হয়। এনিয়ে আজ সারাদিন উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করেছে ক্যাম্পাসে।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক নিয়োগ বাণিজ্যর তদন্ত চলমান থাকার কারণে তিনি সংশ্লিষ্ট পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন– এমন অবস্থান তাঁর বিরোধিতাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের। তাঁদের দাবি, ইউজিসির তদন্তের সুরাহা হওয়ার আগে কোনো নিয়োগ বোর্ড করতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসময় উপাচার্য-বিরোধী শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরেফীনসহ প্রায় ৩০ জন শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বোর্ড বাতিলের দাবি করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ। সকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা আগের নিয়োগ-সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগ বন্ধের দাবি জানান। পরে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা নিয়োগ চালু রাখার দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢোকেন। তাঁরা উচ্চ স্বরে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। উপাচার্যের সঙ্গেও বাগ্বিতণ্ডা হয়।
এসময় ছাত্রলীগের একাংশ-কর্তৃক বিরোধিতাকারী শিক্ষকদের হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপাচার্যের কার্যালয় থেকে ফিরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন।
এ নিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান । বিবৃতিতে বলা হয়, উপাচার্য ও শিক্ষকদের আলোচনা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই উপাচার্যের অফিস কক্ষে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে বহিরাগত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরেফীন বলেন, "আমরা উপাচার্যের সাথে সাধারণ কিছু কথা বলতে গিয়েছিলাম। সেখানে উপাচার্যের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে হঠাৎ করে বহিরাগত অছাত্ররা কার্যালয়ে ডুকে পরে ও আমাদের চরমভাবে হেনস্তা করে। আমাদের একটিই দাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নিয়োগ বোর্ড চলবে না। এছাড়া অছাত্রদের কর্তৃক শিক্ষকদের হেনস্তার বিচার করতে হবে।"
দুপুরের পর ইমাম নিয়োগ বোর্ড প্রশাসনিক ভবন থেকে উপাচার্যের বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকাল তিনটায় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগ বোর্ড বসে। নিয়োগ বোর্ড থেকে কর্মকর্তা সমিতি চাকরী প্রার্থীদের বের করে দেন। তাৎক্ষণিকভাবে আবার প্রার্থীদের উপাচার্যের বাংলোয় নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে বাংলো গেইটে উপাচার্য বিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং প্রশাসনপন্থী শিক্ষক ও শাখা ছাত্রলীগের একাংশ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে উপাচার্য-বিরোধী শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতি বাংলো গেইট ছেড়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, "আমি বিন্দুমাত্র কোনো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীরা যা করেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি ওইসব শিক্ষার্থীদের চিনিও না। দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। ক্লিয়ার বলছি, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। নিয়োগ বোর্ড যা হয়েছে– সব দুর্নীতিমুক্ত।"