পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়ল, কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০–১২০ টাকায়
দেশি জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০–১২০ টাকায়।
কয়েকদিন আগেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৯৫–১০০ টাকা। তবে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাইকারি দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।
বাংলাদেশের ট্রেডিং কর্পোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশি পেঁয়াজের বর্তমান দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বাজারে সরবরাহের ঘাটতির মধ্যে বেশি দাম পাওয়ার আশায় কৃষকেরা অপরিপক্ক পেঁয়াজ কাটা শুরু করেন। ফলে বর্তমানে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। মেহেরপুর জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলেও সরবরাহ এখনও কম।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের কমিশন এজেন্ট সৌমিক ট্রেডার্সের মালিক জসিম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন ১৫–২০ ট্রাক মুড়িকাটা পেঁয়াজ সেখানে আসত। তবে সংখ্যাটা এখন চার–পাঁচে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম সর্বোচ্চ ২২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। পরে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে জানুয়ারির মাঝামাঝি দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় নেমে আসে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, দেশে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের একটি প্রাথমিক জাতের চাষ করা হয়। চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় আট লাখ মেট্রিক টন। পেঁয়াজের এ জাতটি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাহিদা মেটাতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
পেঁয়াজের আমদানি কম
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর ট্যারিফ কমিশন বিকল্প দেশ থেকে পণ্য আমদানির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ পরামর্শ গ্রহণ করে আমদানি করেননি।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সংগৃহীত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে বন্দর দিয়ে চীন ও পাকিস্তান থেকে এক হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস টিবিএসকে বলেন, অন্য সময়ে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন। 'কিন্তু এবার ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ঋণপত্র খুলতে ১০০ শতাংশের বেশি মার্জিন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কারণে আমদানির পরিমাণ ছিল খুবই কম,' জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অনুসারে, চলতি বছরে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭৩ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর প্রায় ৩৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছিল। তবে ২৫ শতাংশ 'উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি' বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত উৎপাদন হিসেব করা হয়েছিল সাড়ে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন, যা চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করে।
অধিদপ্তর কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্চ মাসে পেঁয়াজ কাটার পুরো মৌসুম শুরু হলে পেঁয়াজের দাম কমবে।