প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ল ৭০ পয়সা
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর দুই দিন পরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৭০ পয়সা বা সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার।
পূর্বঘোষিত আগামী ১ মার্চের পরিবর্তে চলতি ফেব্রুয়ারি থেকেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এতথ্য জানানো হয়েছে।
গ্যাজেট প্রজ্ঞাপনে বলা হয় নতুন দর অনুযায়ী, বাসাবাড়িতে ন্যূনতম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহককে প্রতি ইউনিটে ২৮ পয়সা বেশি দিতে হবে, আর সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী গ্রাহককে দিতে হবে ১ টাকা ৩৫ পয়সা।
সেচকাজের জন্যেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিটে যা বেড়েছে ৪৩ পয়সা হারে। খুচরা পর্যায়ে ইউনিটে ৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা করা হয়েছে। আর পাইকারিতে ৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ টাকা ৪ পয়সা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়াতে তা সাধারণ মানুষের ওপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলবে। এর কারণ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল; যেমন: বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, খাদ্যপণ্যসহ সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্যের দামও বাড়বে। শেষ পর্যন্ত এর বোঝা বহন করতে হবে মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত সাধারণ মানুষকে।
তারা সতর্ক করে বলেছে, বিদ্যুতের এই শুল্কবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। কারণ বিদ্যুৎ বিভিন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মৌলিক ইনপুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবসায়ীরা যেহেতু বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির বোঝা বইছে, শেষ পর্যন্ত তারাও দাম বাড়িয়ে এই ব্যয়গুলো গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে গৃহস্থালি থেকে সেচ পর্যন্ত সব খাতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এমন এক সময় জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন বিশ্বের অনেক দেশে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কমেছে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর ২০২৩ সালে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কমেছে, বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ায়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ার বিরূপ প্রভাবের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বিদ্যুৎ খাতের ত্রুটিপূর্ণ নীতিকে দায়ী করে বলেন, 'মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের দাম বাড়ালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বিদ্যুৎ খাতের পলিসিগত বিভ্রান্তি ও কিছু কোম্পানিকে লুণ্ঠনের সুযোগ করে দিয়ে সরকার এখন দাম বাড়িয়েছে, যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ।'