ড. ইউনূসকে ১১৯ কোটি টাকা কর পরিশোধের নির্দেশ হাইকোর্টের
গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ১১৯ কোটি টাকা কর দিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা আক্তার পলি।
এ রায়ের ফলে ২০১১ থেকে ২০১৭ করবর্ষে এনবিআর-এর দাবিকৃত অবশিষ্ট ১১৯ কোটি টাকা গ্রামীণ কল্যাণকে আয়কর হিসেবে দিতে হবে বলে সাংবাদিকদের জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, 'গ্রামীণ কল্যাণের কাছে এনবিআর-এর দাবিকৃত ৫৫৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪৩৬ কোটি টাকা পরিষদ করা হয়েছে। এখন গ্রামীণ কল্যাণকে অবশিষ্ট ১১৯ কোটি টাকা আয়কর দিতে হবে।'
এনবিআরের দাবিকৃত করের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের দায়ের করা মামলার নিষ্পত্তি করে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।
৩ মার্চ গ্রামীণ টেলিকম কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশ থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আত্মসমর্পণের পরে ড. ইউনুসসহ আরও সাত অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হয়।
২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কর ফাঁকির অভিযোগের শুনানি শেষে গত মে মাসে হাইকোর্ট কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ড. ইউনূসকে এনবিআরকে ১২ কোটি টাকারও বেশি অর্থ প্রদানের নির্দেশ দেন।
২৩ মে দানের ওপর প্রায় ১৫ কোটি টাকা করের দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নোটিশের বৈধতার চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ড. ইউনূস।
পরে ২০২৩ সালের জুনে ইউনূস সেন্টার এক বিবৃতিতে মুহাম্মদ ইউনূসের কর বকেয়ার বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানায়।
ইউনূস সেন্টার বলে, 'প্রফেসর ইউনূসের যে টাকা নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে আলাপ চলছে, তার পুরোটাই প্রফেসর ইউনূসের অর্জিত টাকা। তার উপার্জনের সূত্র প্রধানত তার বক্তৃতার ওপর প্রাপ্ত ফি, বই বিক্রিলব্ধ টাকা ও পুরস্কারের টাকা। এর প্রায় পুরোটাই বিদেশে অর্জিত এবং এ অর্থ বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা হয়েছে। কর বিভাগ তা অবহিত আছে, কারণ সব টাকার হিসাব তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকে।'
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ড. ইউনূস জীবনে সম্পদের মালিকানামুক্ত থাকতে চান। কোথাও তার মালিকানায় কোনো সম্পদ নেই (বাড়ি, গাড়ি, জমি বা শেয়ার ইত্যাদি)। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার উপার্জনের টাকা দিয়ে ২টি ট্রাস্ট গঠন করবেন।
'একটি ট্রাস্ট করলেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট। অল্প কিছু টাকা দিয়ে (মোট টাকার ৬ শতাংশ) উত্তরসূরীদের কল্যাণের জন্য করলেন ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট। ফ্যামিলি ট্রাস্টের মূল দলিলে নিয়ম রাখলেন যে, তার পরবর্তী এক প্রজন্ম পরে এ ট্রাস্টের অবশিষ্ট টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল ট্রাস্টে ফিরে যাবে। তিনি এটা করলেন যাতে তার বর্তমানে ও অবর্তমানে এ অর্থ ট্রাস্টিদের তত্ত্বাবধানে নিরাপদে থাকে এবং তারা ট্রাস্ট ২টির লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৎপর থাকে,' বলা হয় বিবৃতিতে।
দানকর দেওয়ার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, 'ড. ইউনূসের নিজের টাকা নিজের কাছে রেখে দিলে তাকে কম কর দিতে হতো। কারণ ব্যক্তিগত করের হার প্রতিষ্ঠানিক করের হারের চেয়ে কম। দানকরের প্রসঙ্গটি তুলেছেন তার আইনজীবী। আইনপরামর্শক বলেছেন, ট্রাস্ট গঠনের কারণে তাকে দানকর দিতে হবে না। কারণ বড় ট্রাস্টটি জনকল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত। ফ্যামিলি ট্রাস্টের ব্যাপারে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, এরকম ক্ষেত্রে (অর্থাৎ প্রফেসর ইউনূসের অবর্তমানে তার সম্পদের কী হবে, সে চিন্তায় যদি তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে) তাকে কোনো কর দিতে হবে না। কারণ এটা হবে তার অর্জিত টাকার একটি সুব্যবস্থা করে যাওয়া।
'আইনজীবীর পরামর্শের ভিত্তিতে টাকা স্থানান্তর করার সময় প্রফেসর ইউনূস কোনো কর দেননি। কিন্তু তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এক্ষেত্রে তাকে কর দিতে হবে। রিটার্নের যেখানে তিনি দানের তথ্যটি উল্লেখ করেছিলেন, সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা তার ওপর দানকর ধার্য করে দিলেন। তিনি টাকার অঙ্ক রিটার্নসে উল্লেখ করায় কর কর্মকর্তা তা দেখে কর আরোপ করেছেন। আইন পরামর্শকের সাথে পরামর্শ করে প্রফেসর ইউনূস এ ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত চাইলেন। আদালত কর দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।'
'এখানে তার কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। কর দিতে হবে কি না, এ ব্যাপারে তার পক্ষ থেকেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়েছিল,' বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ইউনূস সেন্টার আরও বলেছে, 'আদালতে সরকার যায়নি, প্রফেসর ইউনূস গিয়েছেন। কর বিভাগ কোনো পর্যায়ে বলেনি যে প্রফেসর ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন। এখানে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্ন উঠেনি। প্রশ্ন ছিল আইনের প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে। এখন প্রফেসর ইউনূস বিবেচনা করবেন তিনি কর পরিশোধ করবেন নাকি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চাইবেন। করের আইন যদি এক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য না হয়, প্রফেসর ইউনূস তাহলে সে টাকাটা জনহিতকর কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এই হলো কর নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পেছনে তার উদ্দেশ্য, ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নয়।'