ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি কর্মসংস্থান গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন
মালয়েশিয়া ও ওমানে চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ায় গেলো ফেব্রুয়ারিতে বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
গত তিন মাস ধরে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির প্রবণতা নিম্নমুখী। নিয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, এই প্রবণতা সামনেও অব্যাহত থাকতে পারে, কারণ মালয়েশিয়াসহ বেশকিছু দেশে গিয়ে চাকরি না পাওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে সরকার এখন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
দেশের অর্থনীতির বৃহদাংশ নির্ভর করে রেমিট্যান্স আয়ের ওপর। ২০২৪ সালের দ্বিতীয় মাসে মোট ৭৪,৩০৬ জন শ্রমিককে বাইরে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৩২% কম এবং মাস হিসাবে ১৫.৪২% কম।
তবে জনশক্তি রপ্তানি কমলেও ফেব্রুয়ারিতে ২.১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের মাসগুলোর গড় আয়ের তুলনায় ৩৮.৪৬% বেশি এবং গত ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মালয়েশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রতিমাসে ২২,০০০ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। তবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ দিয়েছে মাত্র ৬,১১৫ জন কর্মী।
এছাড়া, গত নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত শ্রমিক পাঠানোর অভিযোগে বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে ওমান। এর ফলে দেশটিতে নতুন বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাকরি পাওয়ার পরিমাণেও ধস নেমেছে।
উপসাগরীয় দেশটি গত বছরের প্রায় প্রতি মাসেই ১০ হাজারের কাছাকাছি শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু গতমাসে দেশটি বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমিক নিয়োগ দেয়নি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-এর সেক্রেটারি জেনারেল আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, "চাকরি-সংক্রান্ত বেশকিছু সমস্যার কারণে, সরকার এখন দক্ষ কর্মীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে কঠোর বিধিবিধান তৈরি হয়েছে, যার ফলে সামগ্রিকভাবে কর্মীদের টার্নওভারের হার কম হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ার বৃহৎ শ্রমবাজারও এই নিয়মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে, শ্রমিকের এই সংখ্যা এখনও বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরত্বপূর্ণ, কারণ কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশ সাধারণত মাসপ্রতি ৬০,০০০ থেকে ৭০, ০০০ শ্রমিক রপ্তানি করতো।
শ্রমিক নিয়োগকর্মীরা জানান, যেসব শ্রমিক মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাইরে যেতে পারেননি, তারা পরবর্তী দুই বছরে গিয়েছেন, যে কারণে পরের দুই বছরে শ্রমিক রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়েছে।
প্রধান গন্তব্য সৌদি আরব
সাধারণত, সৌদি আরবই বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রধান গন্তব্য, এবং গত ফেব্রুয়ারিতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। গতমাসে মোট ৪৪,০৮৩ জন শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে।
এই বিশাল সংখ্যার বেশিরভাগই কম দক্ষতাসম্পন্ন নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং গৃহকর্মী হলেও দেশটি আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের পরে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, কুয়েত এবং জর্ডান ছিল বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হচ্ছে ৩১ মে
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার চলমান প্রক্রিয়া আগামী ৩১ মে বন্ধ হয়ে যাবে।
দীর্ঘ চার বছরের বিরতির পর ২০২১ সালে মালয়েশিয়া পুনরায় তাদের জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। এর ফলে সংখ্যার দিক থেকে সৌদি আরবের পরই শ্রমিকদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে দেশটি।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল গত সপ্তাহে বলেছেন, এই ডেডলাইন মালয়েশিয়াকে কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে এবং দেশে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে।
তিনি আরও বলেন, "সিদ্ধান্তটি বিদেশি কর্মীদের ওপর শোষণ রোধে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।"
বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান টিবিএসকে বলেন, "বর্তমান প্রবাহে যে কোটা ছিল তা মে মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।"
তিনি জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার পর থেকে ৪.২৬ লাখ বাংলাদেশি ইতোমধ্যে সেদেশে পাড়ি জমিয়েছে। আরও ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ জন শীঘ্রই পাড়ি জমাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া এবং ওমানে ভুয়া চাকরির প্রস্তাব পেয়ে অনেকেই চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে বিদেশে গিয়ে তাদেরকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৭৯,০০০ টাকা নির্ধারণ করলেও মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকরা সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে সেদেশে যাচ্ছেন।