নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে চারজনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় ডাকাত সন্দেহে চার ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে গ্রামবাসী। রোববার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের বাঘুরী মধ্যপাড়া বড়বিলে এই ঘটনা ঘটে।
এতে ঘটনাস্থলে ৩ জন এবং আহত অবস্থায় হাসপাতালে ১ জন মারা যান। আরও একজন হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি আছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় এখনও শনাক্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
তবে হাসপাতালে থাকা আহত ও নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন, কাঁচপুর ইউনিয়নের সুখেরচর এলাকার আমানুল্লার ছেলে জাকির (৪৫) ও আড়াইহাজার উপজেলার জালাকান্দি গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী (৪২)। তাদের মধ্যে জাকির মৃত্যুবরণ করেছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, তারা আহতকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং নিহত তিনজনের পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, 'মূলত এই এলাকায় কয়েকটি ডাকাতি হওয়ায় গ্রামবাসী ডাকাত সন্দেহে তাদের গণপিটুনি দেয়। আপাতত পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। দ্রুতই এই বিষয়ে মামলাসহ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।'
পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বিলের ভেতর জাকিরকে কয়েকজন নিয়ে বসে থাকতে দেখেন। তখনই তাদের সন্দেহ হয় জাকির ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ ইতিপূর্বেও জাকির এই গ্রামে ডাকাতি করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
তাদের দেখতে পাওয়ার পরপর ডাকাতির চেষ্টা করা হয়ে পারে, এই সন্দেহে মুঠোফোনের মাধ্যমে আশেপাশের গ্রামে জানিয়ে দেয়া হয় বড়বিলে ডাকাতরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরপরেই মসজিদের মাইকে ঘোষণা আসে ডাকাত ধরার। কয়েকটি মসজিদে মাইকিং করলে বাঘুরী মধ্যপাড়া, পঞ্চমীঘাট, সুখেরচর, অলিপুরার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ গ্রামবাসী বিলে নেমে তাদের আটক করে। গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান।
তিনজন জনতার হাত থেকে পালাতে পারলেও তাদের একজনকে বাঘুরী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে আলিপুরা বাজারের স্থানীয়রা খুঁজে পান।
স্থানীয়দের ভাষ্য, রাত ৩টার দিকে বিল থেকে পালিয়ে আসা এক ডাকাতকে আলিপুরা বাজারে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে ফের গণপিটুনি দিয়ে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেয় অলিপুরা বাজারের লোকজন।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে সরেজমিনে বাঘুরী মধ্যপাড়া গিয়ে দেখা যায় পুরো গ্রামে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
মধ্যপাড়া মসজিদের পাশে ৩টি রক্তাক্ত ও জখমি লাশ সুরতহালের জন্য রাখা ।
স্থানীয়রা বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটায় এলাকাবাসীর মধ্যে ডাকাতের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা কাজ করছিল।
অলিপুরা বাজারের এক দোকানি বলেন, 'ডাকাইতরা মানুষের সারাজীবনের সম্পত্তি নিয়া যায়। লুট করে আবার মাইরাও যায়। এজন্য গ্রামের মানুষের অনেক ক্ষোভ। প্রতি বছর ঈদের আগে ডাকাতি বাড়ে। এজন্যেই এবার ডাকাত মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে।'
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির বলেন, 'নিহত ডাকাত জাকির এর আগেও ডাকাতি করতে এসে বাঘুরী গ্রামে আটক হয়েছিলেন। সেবার সবার কাছে মাফ চাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি ৩টা ডাকাতি হওয়ায় মানুষের ভেতর ক্ষোভ ছিল। সেজন্য তাকে দেখেই গণপিটুনি দিয়েছে গ্রামবাসী।'
ঘটনাস্থলে ছায়াতদন্ত চালানো সিআইডি পুলিশের এক পরিদর্শক বলেন, 'নিহতদের মধ্যে জাকিরের নামে আগে ডাকাতির মামলা ছিল। যারা মারা গেছেন, তাদের পরনে ছিল হাফপ্যান্ট ও কালো গেঞ্জি। সাধারণত ডাকাতরা এই ধরনের পোশাক পরে ডাকাতি করে। কিন্তু তাদের কাছে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তারা আসলেই ডাকাতি করতে জড়ো হয়েছিল নাকি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে, তা জানার চেষ্টা চলছে।'
গণপিটুনিতে বেঁচে যাওয়া একজন পুলিশকে বলেছেন, তাদের ছয়জনকে ডেকে এনেছিলেন জাকির। আরও পাঁচজন তাদের সাথে যোগ দেওয়া কথা ছিল। কিন্তু জাকির কেন তাদের ডেকেছিলেন, সেটি তার জানা নেই।