বুড়িগঙ্গা নদীতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই: পরিজার পর্যবেক্ষণ
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র।
বিশ্ব পানি দিবসকে কেন্দ্র করে বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ পর্যবেক্ষণ এবং পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে এ তথ্য দিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল (শুক্রবার) জাতিসংঘের বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিজা ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানে হয়, জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ৪ মিলিগ্রাম/লিটার থাকা প্রয়োজন। এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীতে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে শ্যামপুর বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল পর্যন্ত দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) মাত্র ০.১৪ - ০.৭২ মিলিগ্রাম/লিটার।
এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গা নদীতে কোনো জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। একইসাথে নদীটির পরিবেশ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পরিজার সভাপতি প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মোস্তাক হোসেন।
মো: আবদুস সোবহান বলেন, "জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে ২.২ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত এবং এদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যা ২ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে।"
আবদুস সোবহান আরও বলেন, "বর্তমানে বিশ্বে কৃষি খাতে ৭০ শতাংশ (যার বেশির ভাগই সেচ কাজে), শিল্প খাতে ২০ শতাংশ (বিশেষ করে জ্বালানি ও উৎপাদনে), গৃহস্থালি কাজে ১০ শতাংশ (যার এক শতাংশেরও কম সুপেয় পানি) হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, "পানি আমাদের জন্য একটি প্রধান প্রয়োজনীয় উপাদান এবং তা সকল প্রাণ ও প্রকৃতির জন্যও। কিন্তু নিরাপদ পানি অভাবে হাজারো সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। মানব শরীরের কিডনি, লিভার, হার্টসহ নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। নিরাপদ পানির অভাবে ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ পেটের সমস্যাসহ নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন।"
পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বলেন, "ঢাকা শহরের লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। সকালবেলায় বস্তির মানুষেরা এক কলসি পানির জন্য এই শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে; যা তাদের জীবন জীবিকাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলছে। সরকারকে এই প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।"
মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সদস্য সচিব মাহবুল হক বলেন, "পানি জনগণের অধিকার এবং মানবাধিকার। এই অধিকারকে বাস্তবায়ন করার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। একটি রোডম্যাপ করে দেশব্যাপী পানির অধিকারের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।"