এ বছর প্রতিকেজি আলু খেতে হবে ৫০ টাকার বেশি দিয়ে: কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন
আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর কেজিতে ৫০ টাকার বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাদের আলু কিনে খেতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড আয়োজিত 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, "গত বছর কোল্ড স্টোরেজে যেসব আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল সেগুলোর দাম ছিল ৮ থেকে ১২ টাকা কেজি। এবারে যেগুলো রাখা হচ্ছে সেগুলোর দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কৃষকরা এবার এই দামে আলু বিক্রি করেছেন। কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে এসব আলু যখন বাজারে আসবে, তখন এর দামও বেশি হবে।"
ঢাকার বাজারে অবশ্য এখনই ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের কারণে এ বছর অন্তত ২০ শতাংশ আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে সংকট ও বাজার অস্থিরতার কারণে ভালো দাম পেয়ে কৃষক অন্তত ৩০ শতাংশ আলু তুলে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজগুলোতেও এ বছর ৩০ শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ হয়েছে; ঠা্কুরগাও, রংপুরের মত জায়গাগুলোতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। যে কারণে এ বছর বেশি দাম দিয়ে আলু খেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কোল্ড স্টোরেজে বিনিয়োগে কম সুদে মূলধন চান উদ্যোক্তারা
দেশে বর্তমানে চারশতাধিক কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। যেগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোক্তারা চান পেঁয়াজ, টমেটো, গাজর, মাংস, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ তৈরিতে নতুন বিনিয়োগ করতে। এজন্য সরকারের কাছে কম সুদে মূলধন চান এ খাতের উদ্যোক্তারা।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, "বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ ১৩-১৪ শতাংশ। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে আমরা প্রজেক্ট করলে সেটা লাভজনক করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এ কারণে সরকার যদি আমাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বা বিদেশ থেকে ফান্ড নিয়ে ৩-৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়, তাহলে আমরা এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারবো।"
তিনি বলেন, "দেশের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে ৪টি করে চেম্বার রয়েছে। যেগুলো দুর্বলভাবে ব্যবসা করছে, সেগুলোর একটি বা দুটি চেম্বারকে বিশেষভাবে পেঁয়াজ বা অন্য পেরিশেবল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য দরকার বিনিয়োগ, যে সহায়তাটুকু সরকারের কাজ থেকে আমরা চাই।"
অনুষ্ঠানে সাপ্লাই চেইনে কোল্ড স্টোরেজ কী ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড বসুন্ধরার আইসিসিবিতে তিন দিনব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। মেলাটি আগামী ১৬ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত চলবে বলে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়। এতে কোল্ড স্টোরেজের নানান প্রযুক্তির প্রদর্শনী থাকবে।
অনুষ্ঠানে কোল্ড চেইন পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন সংক্রান্ত এফবিসিসিআইয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, "পুরো একটি কোল্ড স্টোরেজ আমদানি করতে আমাদের ১ শতাংশের মত শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু যখন এর একটা পার্টস আমদানি করতে হয়, তখন আমাদের এই শুল্ক ১৩০ শতাংশ হয়ে যায়। বিনিয়োগের জন্য এটি একটি বড় সংকট। এটি ৩-৫ শতাংশের মধ্যে হলে ভালো হয়।"
অনুষ্ঠানে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, "কোল্ড স্টোরেজ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, নিরাপদ খাদ্যের জন্যও দরকার। কারণ অনেক খাবার প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়, যেটা কোল্ড স্টোরেজে রাখতে পারলে আর দরকার হবে না। এখানেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।"
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়জুল আলম চৌধুরী।