ছাত্ররাজনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ছাত্ররাজনীতির নামে খুন, চাঁদাবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন নেতিবাচক ঘটনার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠিতে তারা এ কথা জানান।
চিঠিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির অনুমোদন না দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা লিখেছেন, 'বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা হয়েছে আধিপত্য, দাপট, র্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মত ঘটনা এবং এর ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এর চরম মূল্য হিসেবে আমরা সাবেকুন্নাহার সনি (৮ জুন, ২০০২), আরিফ রায়হান দ্বীপ (২ জুলাই, ২০১৩) এবং সর্বশেষ আবরার ফাহাদকে (৭ অক্টোবর, ২০১৯) হারিয়েছি।'
শিক্ষার্থীদের চিঠির একটি কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে এসেছে। গতকাল সোমবার (১ এপ্রিল) বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা এ চিঠি লিখলেন।
এর আগে ৩০ মার্চ তারা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরও গত বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা কয়েক দফা দাবি নিয়ে বুয়েট প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানান। সেই সঙ্গে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনও শুরু করেন। তারা ছাত্রলীগ নেতা রাব্বির স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাব্বির হলের সিট বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পরে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে ৩১ মার্চ পাল্টা কর্মসূচি করে ছাত্রলীগ। কর্মসূচি থেকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা চিঠিতে বলেন, দাপটের আড়ালে ছাত্ররাজনীতির কারণে আমাদের ক্যাম্পাসে উন্মুক্তভাবে বিচরণের অধিকার, ক্যাম্পাসের সুস্থ অ্যাকাডেমিক পরিবেশ, আমাদের স্বাধীনতা, হলের মেসের টাকার সৎ ব্যবহার, ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত থাকা, নবীন আগত বুয়েটিয়ানদের একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগ এর অধিকার সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।'
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমাদের চাওয়া বুয়েটকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর যে ভিশন ছিল, তা বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়।'
তারা আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী, আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন; ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েকবছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দিবো খুব শীঘ্রই।'
চিঠিতে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, 'শেষ কয়েকবছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা, আপনার হাজারো সন্তান আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।'