রাজধানীতে শেষ সময়ে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
ঈদুল ফিতরের আর বাকি মাত্র দুই দিন। এই সময়ে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন। পছন্দের পোষাক কিনে ঘরে ফিরছেন। ক্রেতাদের ভিড়ে দোকানিদেরও ব্যস্ততার শেষ নেই। কোনো কোনো দোকানে এমন ভিড় যে পোষাকের দাম পরিশোধ করার জন্য ক্রেতাদের লাইন ধরে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে এ চিত্র দেখা গেছে।
তানভির নামে এক বিক্রেতা বলেন, 'ক্রেতা ভালো আসছে। সকাল ১০টা থেকেই ক্রেতারা আসতে শুরু করেন।' আজ রাত ২টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকবে বলেও জানান তিনি।
আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল, আর চাঁদ না দেখা গেলে আগামী পরশুদিন ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। এই মুহূর্তে ক্রেতাদের হাতে বেশি সময় নেই। তাই সবার ব্যস্ততা শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়।
কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাইদুর রহমান বলেন, 'একটি পাঞ্জাবি ও শার্ট কিনেছি।'
তিনি বলেন, 'পাঞ্জাবির দাম বেড়েছে। এবার যে পাঞ্জাবি তিন হাজার ২০০ টাকায় কিনেছি, গতবার সেটা কিনেছিলাম দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায়।'
তার সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু বেলাল। তিনি বলেন, 'একটি পাঞ্জাবি কিনব, তা এখনও পছন্দ হয়নি।'
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ইয়োলো, জেন্টেল পার্ক, আড়ং, টুয়েলভ ক্লোথিংসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। দোকানগুলোর কাউন্টারে বিল দেওয়ার জন্য ক্রেতাদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
দেশিয় তাঁত ও কারুশিল্পীদের কাজ নিয়ে দশটি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত একটি উদ্যোগ দেশী দশ। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে এ শোরুমে দেখা যায়, ক্রেতারা কেউ কেউ তাদের পছন্দের পণ্যের দরদাম করছেন, কেউ আবার পছন্দের পণ্যটি কিনছেন।
এ আউটলেটের অ্যাডমিন ম্যানেজার শরিফুজ্জামান রানা দ্য বিজনেস স্ট্যানডার্ডকে বলেন, 'বিক্রি গত ঈদের মতোই হয়েছে। আজ যারা আসছেন, তারা বৈশাখের জন্য পাঞ্জাবিই বেশি কিনছেন। আর ঢাকায় যারা ঈদ করবেন, তারাই এখন মার্কেটে বেশি আসছেন।'
স্ত্রীকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন এ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, 'পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করা হয়েছে। আজ স্ত্রীকে নিয়ে বৈশাখের পোশাক কিনতে এসেছি। একটি পাঞ্জাবি ও শাড়ি কিনেছি।'
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন যারা আসছেন, তারা বড়দের পোশাক কিনছেন বেশি। বাচ্চাদের পোশাক ২০ রমজান পর্যন্ত বেশি বিক্রি হয়েছে।
এদিকে নিউমার্কেট এলাকায় ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে প্রসাধনী, জুতা ও পাঞ্জাবির দোকানে ভিড় ছিল বেশি।
বাবার সঙ্গে পাঞ্জাবি কিনতে এসছেন মেহেদি হাসান । তিনি বলেন, 'এতদিন অফিস ছুটি ছিল না। তার ওপর বেতনও পাইনি। তাই কেনাকাটাও করতে পারিনি। আজ অফিস ছুটি হলো, বেতনও পেলাম। তাই কেনাকাটা করতে এসেছি।'
ফুটপাতে বিক্রি কম
এদিকে শপিং মল ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে কেনাকাটার ধুম পড়লেও ফুটপাতের দোকানগুলোতে বিক্রি তুলনামূলক কম।
কারওয়ান বাজার ও পান্থপথ এলাকার ফুটপাতের এক পোশাক বিক্রেতা বলেন, '৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে প্যান্ট বিক্রি করি। গত ঈদের এই সময় কথা বলার সময় পাই নাই। আর এবার সকাল থেকে ১১ টা পর্যন্ত মাত্র একটি প্যান্ট বিক্রি করেছি। আমাদের বিক্রি গত ঈদের চেয়ে অর্ধেক কমে গেছে।'
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির (বিএসওএ) জরিপে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যবসা হয় প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে পোশাক খাতে খরচ হয় ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। নামাজের টুপি থেকে শুরু করে দুধ, চিনি ও আনুষঙ্গিক প্রায় সবকিছুর পেছনেও অনেক টাকা খরচ হয়।
সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, 'আমাদের একটি শ্রেণির তো টাকার অভাব নেই, তা আমরা সবাই জানি। সমস্যা হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের। বলতে গেলে তাদের খুবই খারাপ অবস্থা।'