স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৫২ বিদেশিকে নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪৫২ জন বিদেশি নাগরিককে নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ।
দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট- ১৯৫২ এবং বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পরারি প্রভিশন) অর্ডার- ১৯৭২ অনুযায়ী, এসব ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে এ বিষয়ে লিখিতভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এসব তথ্য জানিয়েছেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব শরীফা আহমেদ।
তবে এসব বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে কে কী পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তা জানায়নি সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
যুগ্ম সচিব শরীফা আহমেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালে প্রথম ৪ জন বিদেশি ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে ২০০৩ ও ২০১০ সাল ছাড়া প্রতিবছরই বিদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
এক বছরে সবচেয়ে বেশি ৪৩ জন বিদেশিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে ১৯৯৫ সালে। ওইসময় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল।
তার আগের বছর ১৯৯৪ সালে ৩৭ জন এবং ১৯৯৭ সালে ২৬ জন বিদেশিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৪ জন বিদেশিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের কারণে কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শরীফা আহমেদ। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কারণে কয়েকজনকে স্থায়ী আবাসন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর কয়েকজনকে বিশেষ বিবেচনায় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কোন কোন দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে– কূটনৈতিক বিষয় হওয়ায় সেই তথ্য জানায়নি সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
এ বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মোসাম্মাৎ শাহানারা খাতুন টিবিএসকে বলেন, "যেসকল বিদেশিরা নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশের নাগরিকদের সাথে সম্পর্কজনিত কারণে পেয়েছেন।"
বিবাহজনিত কারণে বা পিতা মাতার দেশ হিসেবে কেউ কেউ নাগরিকত্ব পেয়েছে। অল্প কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা বা সমাজ সেবার মত কাজের জন্য নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নাইজেরিয়া, ইরান, ইংল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগই বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব পেয়েছেন।"
তিনি বলেন, "ভূটানের একজন নাগরিক বাংলাদেশের এক মেয়েকে বিয়ের পর নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন। সব প্রক্রিয়া শেষে তাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বিয়ে করে নাগরিকত্ব পেয়েছেন নাইজেরিয় ফুটবলার এলিটা কিংসলে। ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্ট ও জুলিয়ান ফ্রান্সিস বিশেষ কারণে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত সুইডিশ বিচারপতি সৈয়দ আসিফ শাহকারকেও নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ।"
৭৩ বছরের পুরনো আইন দিয়ে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে এই আইন হালনাগাদ করে নতুন করে প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে 'নাগরিকত্ব আইন- ২০১৬' এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ার বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আপত্তি ওঠে। এরপর আইনটি পাসের আর উদ্যোগ নেয়নি সরকার।
এখন নাগরিকত্ব আইনের পরিমার্জিত খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।