জার্মানিতে বিদেশিদের চাহিদা বাড়লেও নাগরিকত্ব পেতে অপেক্ষা করতে হবে কয়েক বছর
জার্মানিতে এখন দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমোদনের পর, অনেক বিদেশি নাগরিকই নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী। এ কারণে আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জার্মানির শহরগুলোতে আবেদন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে।
জোট সরকারের নাগরিকত্ব সংস্কার আইন পাসের লক্ষ্য ছিল আরও বেশি মানুষকে জার্মান নাগরিক হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু জার্মান পাসপোর্টের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপেক্ষার সময়ও বেড়ে গেছে।
জার্মান সংবাদপত্র ভেল্ট আম জোনটাগ ২৫টি বৃহৎ শহরে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, গত দুই বছরে নাগরিকত্ব আবেদন প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চলতি বছরের জুনে নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ার পর এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।
পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ৮১ হাজার জন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিল, আর চলতি বছর এ পর্যন্ত এক লাখ ২২ হাজার ৮৮০ জন আবেদন করেছেন। এ সংখ্যা এতই বেশি যে কর্তৃপক্ষ আবেদনগুলো সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
শুধু ২০টি শহরেই দুই লাখ ১৭ হাজারটির বেশি আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। কয়েকটি শহর বলছে, একটি জার্মান পাসপোর্ট পেতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি বাসিন্দারা পাঁচ বছর বসবাসের পর জার্মান নাগরিক হতে পারবেন। তবে আগে জার্মানির অধিবাসী হতে আট বছর থাকতে হতো। তাছাড়া যে-সব আবেদনকারীরা জার্মান ভাষায় দক্ষ ও সমাজের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারেন, তারা তিন বছরের মধ্যে নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
বাসিন্দারা তাদের মূল জাতীয়তা বজায় রেখে জার্মান নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের এই আইন পরিবর্তনের ফলে অনেকেই জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ গ্রহণের জন্য এগিয়ে এসেছেন।
আবেদনকারীদের জন্য এ নাগরিকত্বের মানে কী?
এটি সংস্কারের আগে থেকেই জার্মান নাগরিকত্ব প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ছিল। বিশেষত বার্লিন ও কোলনের মতো বড় শহরগুলোতে নাগরিকত্ব পেতে সময় বেশি লাগতো। এখন কিছু বিদেশি নাগরিককে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বার্লিন স্টেট অফিস ফর ইমিগ্রেশন-এর এক মুখপাত্রের মতে, আইন সংস্কারের পর থেকে আবেদন সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখপাত্র আরও জানান, গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১০৪টি আবেদন জমা পড়ছে, যার প্রক্রিয়াকরণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু শহরের কর্তৃপক্ষ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বেশি সমস্যায় পড়ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো, অনেক শহরেই অনলাইনে আবেদনের সুযোগ নেই আর আবেদনকারীদের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে একটি প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হতে হয়।
ফ্রাঙ্কফুর্টের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, কেবল প্রাথমিক সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেই আট মাসের বেশি সময় লাগছে। এর পরে প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও ১৪ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বলে ভেল্ট আম জোনটাগ-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্রেমেনে নাগরিকত্ব পেতে কখনো কখনো অন্তত ২৪ মাস সময় লাগে বলে আরেক মুখপাত্র জানিয়েছেন। অন্যদিকে, লাইপজিগে পরিস্থিতি বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং। সেখানকার এক মুখপাত্র জানিয়েছে, বর্তমানে একটি প্রাথমিক সাক্ষাৎকারের জন্য একজনকে ৫০ মাস অপেক্ষা করার নিয়ম রয়েছে এবং এর পরেই তিনি আবেদন জমা দিতে পারছেন।
বিদেশিরা যেভাবে প্রক্রিয়াটিকে পারে?
আইন অনুযায়ী, নাগরিকত্ব পেতে দেরি হলে আবেদনকারীদের পক্ষে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ড্রেসডেন ইমিগ্রেশন অফিস জানিয়েছে, প্রশাসনিক আদালতের বিধিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারীর কাছে তিন মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানানো বাধ্যতামূলক। যদি কোনো তথ্য বা নথির ঘাটতি থাকে, তবে তা আবেদনকারীকে জানাতে হবে অথবা শর্ত পূরণ না হলে আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
যদি কর্তৃপক্ষ এই সময়সীমা মেনে না চলে, তবে আবেদনকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ পান বলে ড্রেসডেনের এক মুখপাত্র জানান। এ ধরনের মামলা প্রশাসনিক আদালতের কাজকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য এটি একটি বাড়তি আইনি খরচ।
আবেদনকারীকে আদালতের এসব আইনগত ফি আগেই দিতে হয়। তবে মামলায় জিতলে এই খরচগুলো রাষ্ট্রই বহন করে।
ইন্টিগ্রেশন ও মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হান্স ভর্লেন্ডার বলেন, এসব পরিস্থিতি কিছু শহরের আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে প্ররোচিত করছে। তিনি ভেল্ট আম জোনটাগকে আরও বলেন, "কিছু মিউনিসিপাল এসব মামলা ঠেকাতে আবেদন গ্রহণে বিলম্ব করছে।" তারপরও এসব মামলা হবেই বলে জানান তিনি।