উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো এমপি ও মন্ত্রীর নিকটাত্মীয় বা স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না— আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশনার পরেও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরে না দাঁড়ানো প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে আওয়ামী লীগ।
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট এমপি ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা আরো জানিয়েছেন, দুই দিনের মধ্যেই দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া ও দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আগামী ৮ মে সারাদেশের ১৪৮টি উপজেলায় প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র অনুসারে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সারাদেশের ৩৫টি উপজেলায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও এমপিদের পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় গতকাল সাত উপজেলায় সাতজন প্রার্থীকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াখালী-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী অমি। বকি ছয়জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, দলীয় নির্দেশনার পরেও যারা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, "দলের নিয়মনীতি ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের (এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়দের) বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
দলের আরেকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের প্রথম ধাপে যারা দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অমান্য করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে পরের ধাপগুলোর প্রার্থীদের কঠোর বার্তা দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বেশ আগেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেয় হয়, এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় প্রার্থী থাকবে না। দল থেকে কাউকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে না।
নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ টিবিএসকে বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তাদের তালিকা রয়েছে দলের কাছে। দলীয় প্রধান এ ব্যাপারে দ্রুতই কঠোর সিদ্ধান্ত নিবেন।
প্রথমধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই ছেলে আতাহার ইশরাক ওরফে সাবাব চৌধুরীকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করায় নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী আলোচনায় আসেন। তিনি এখন পর্যন্ত প্রার্থীতা বহাল রেখেছেন।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনাম চৌধুরী এবারও চেয়ারম্যান পদে এ উপজেলায় প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তিনি টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ও মামাতো ভাই টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে হারুন অর রশিদ হিরা ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। অন্যজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম তপন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে মো. আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া শাজাহান খানের আপন চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খানও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ থেকে প্রার্থী হয়েছেন মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমি নির্বাচনে অবশ্যই থাকব। এলাকার জনগণ আমাকে পুনরায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে প্রত্যাশা করি।"
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "পার্টির যারা মন্ত্রী-এমপি এমন পর্যায়ে আছেন তাদের জন্য নির্দেশনা রয়েছে, তাদের সন্তান ও স্বজনরা যেন উপজেলা নির্বাচনে না আসে। প্রথম পর্যায়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় চলে গেছে। কেউ কেউ বলেছেন আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সুবিধা হতো। তারপরেও প্রত্যাহার কেউ কেউ করেছেন, কেউ কেউ করেননি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের যে সময়সীমা তারপরেও ইচ্ছা করলে করতে পারবেন।"
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, "দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মতো এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই করা হবে।"
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "এখানেও কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিচার করবে। চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত যারা প্রত্যাহার করবে না সময়মতো দল ব্যবস্থা নেবে।"