সারাদেশে প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট লোড-শেডিং, সচিবালয়ে পরিমিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের নির্দেশনা
দেশে তাপপ্রবাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। উৎপাদন বাড়লেও লোড-শেডিং এড়াতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিকে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে সচিবালয়ে বিদ্যুৎবিভ্রাট রোধে বিদ্যুতের পরিমিত ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী কার্যালয়।
বিদ্যুতের কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত ১টার সময় সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫,৭০০ মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের উৎপাদন হয়েছে ১৪,১৬৩ মেগাওয়াট। আর এ সময় লোড-শেডিং হয়েছে ১,৪৬৮ মেগাওয়াট।
তবে সরকারের বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, চাহিদার বিপরীতে সারাদেশে ২,০০০ মেগাওয়াটের বেশি লোড-শেডিং করতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিজিসিবির দৈনিক প্রতিবেদনে লোড-শেডিংয়ের সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। যে তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে, বাস্তাবে লোড-শেডিংয়ের পরিমাণ বেশি।
গত ২২ এপ্রিল দেশে ১৬,২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যা এ যাবত সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্ত উৎপাদন বাড়লেও তীব্র তাপদাহের মধ্যে সারাদেশে বেড়েছে লোড-শেডিং, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে তীব্র লোড-শেডিং দেখা দিয়েছে।
দেশের ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ।
আরইবির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না শর্তে টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে আমাদের বিতরণ এলাকায় যে চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। যার কারণে এই গরমের মধ্যেও বাধ্য হয়ে লোড-শেডিং করতে হচ্ছে। গ্রাম অঞ্চলে কোথাও কোথাও লোড-শেডিংয়ের পরিমাণ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টাও করতে হচ্ছে।"
কুমিল্লা লালমাই উপজেলার বাসিন্দা রোজিনা বেগম টিবিএসকে বলেন, "গত একদিনে অন্তত ৮-১০ বার বিদ্যুৎ গেছে। একবার গেলে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পরে আসে। এই গরমে বৃদ্ধা ও শিশুদের জন্য খুবই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত লোড-শেডিং।"
এদিকে রাজধানীতে বিদ্যুৎতের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে ঢাকার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠান– ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)।
তবে লোড-শেডিং না হলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু কিছু এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানা যায়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, "পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে আমরা ফুললোডে চালাতে বলছি। কিন্তু এখানে বড় বিষয় হলো ফাইন্যান্স। গ্যাস আমাকে নিয়মিত দিতে হবে। আমি তো পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে বসে আছি। ১৮ হাজার/ ১৯ হাজার পর্যন্ত আমি দিতে পারব। কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট হাতে আছে। আমার প্রধান সমস্যা হলো, পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো চালু রাখা। তাদের ফাইন্যান্স সাপোর্ট দেওয়া। এটাই এখন আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ।"
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, "বিদ্যুৎ বিভাগ যেভাবে পরিকল্পনা করছে তাতে এ বছর ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী উৎপাদন করা হচ্ছে।"
"গত বছরের তুলনায় এবছর নতুন করে ১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তাই গতবছরের তুলনায় লোড-শেডিং কমছে– এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ১,৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোড-শেডিং হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই," যোগ করেন তিনি।
এদিকে চলমান তাপপ্রবাহে দেশজুড়ে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্থিরতা। মৌসুমের রেকর্ড তাপমাত্রায় গত ছয় দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিটস্ট্রোকে কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহেও তাপপ্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ টিবিএসকে বলেন, "চলমান তাপপ্রবাহ কমার তেমন কোনো সুখবর নেই। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান এ তাপমাত্রা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপরে অব্যাহত থাকবে। আগামী এক সপ্তাহে নাগরিকদের হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচাতে সূর্যের তাপ এড়িয়ে চলতে হবে।"
চলমান তাপপ্রবাহে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে পরিমিত হওয়ার নির্দেশনা
এদিকে, বর্তমান তাপদাহে অত্যধিক গরম ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিদ্যমান বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির (সার্কিট ব্রেকার, ক্যাবল, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি) স্বাভাবিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় তা ওভারলোডে ট্রিপ করার ফলে বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎবিভ্রাট প্রতিরোধের জন্য অফিস কক্ষে অপ্রয়োজনে ডেকোরেটিভ লাইট, ফ্যান, এসি, কম্পিউটারসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সাশ্রয়ী ও পরিমিতভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন- এমন একটি নির্দেশনা দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়।
বিশেষ করে, কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ অফিস কক্ষের বাইরে অবস্থানকালে এসি, ফ্যান, লাইট ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির সুইচ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে নির্দেশনায়।
গত ২৩ এপ্রিল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিবুল ইসলাম সাক্ষরিত বিজ্ঞাপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জরুরি এই বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, 'সারাদেশে লোড-শেডিং পরিহার করতে প্রত্যেকের সর্বাত্মকভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এক্ষেত্রে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান "আমার কক্ষের সুইচ আমি নিজেই বন্ধ করি" মেনে চলি এবং এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা সেটিংস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখি, যা অত্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী (স্রেডা কর্তৃক প্রণীত সরকারি অফিস ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার সম্পর্কিত সমন্বিত পইডলাইন অনুসারে)।'