তাপপ্রবাহের মধ্যে সরবরাহ কমায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম
মাত্র সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে রজধানীর কাঁচাবাজারে মুরগি, পেঁয়াজ, সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়া এবং তাপপ্রবাহের কারণে দাম বেড়েছে এসব নিত্যপণ্যের।
শুক্রবার (৩ মে) কারওয়ান বাজার ও মগবাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ টাকা। অন্যদিকে, সবজির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা করে।
কারওয়ান বাজারের চিকেন হাউজের মালিক দুলাল বলেন, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৯০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২১৫ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে।
তিনি বলেন, "চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। আর আমাদের মুরগি পাইকারি কেনায় দাম বেড়েছে।"
শুক্রবার প্রায় ১০টি মুরগির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১৫ থেকে ২২০ টাকা কেজি। অন্যদিকে, সাত দিনের ব্যবধানে সোনালী মুরগির দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের নোয়াখালী মুরগি আড়ৎ এর বিক্রেতা শরিফ বলেন, "এখন ৪০০ টাকা সোনালী মুরগির কেজি। এটা সপ্তাহখানেক আছে ছিল ৩৬০ টাকা।"
ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, "দুই বছর আগেও ব্রয়লার মুরগির দাম ১৪০-১৫০ টাকা কেজির মধ্যে থাকতো। মাসে একবার কিনতে পারতাম। কিন্তু এখনতো দাম বাড়তে বাড়তে ২২০ টাকায় ঠেকেছে।
"বাসায় মেহমান এসেছে, তাই মুরগি কিনতে আসলাম। তা না হলে এখন আর মুরগি কেনা হয় না। ২০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ৪ জনের সংসার চালাতে একটা পণ্য কিনি, তো আর একটা নেই," যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "তীব্র তাপদাহে প্রান্তিক খামারিদের মুরগি মারা গেছে। মুরগি মারা যাওয়ায় খামারিরা দ্রুত মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন, এর ফলে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহখানেক আগে দাম কমেছিল। এখন চাহিদার তুলনায় মুরগি সরবরাহ কম, তাই দাম বাড়তে পারে।"
তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিরা মুরগির বাচ্চার সংকটে ভুগছে। ২৮ থেকে ৩০ টাকা উৎপাদন খরচের মুরগির বাচ্চা খামারিরা এখন দ্বিগুণ দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা দিয়ে কিনছে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এতে মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।
"প্রান্তিক খামারিদের এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ হয় ১৭০-১৮০ টাকা। আর সোনালী মুরগির উৎপাদন খরচ ২৬৯ টাকা। তাই সোনালী মুরগির কেজি খুচরা বাজারে ৩০০ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয়," বলেন তিনি।
সুমন হাওলাদার আরও উল্লেখ করেন, "সরকারকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। দেখা যায়, দাম বাড়েলে বাজার মনিটরিং বেশি হয়, দাম কমলে হয় না। এটা না করে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। এটা করলে প্রান্তিক খামারিরা লাভবান হবেন।"
ডিম, পেঁয়াজ ও সবজির দামও বেশি
শুক্রবার বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম জানান, ১০০ ডিমে পাইকারিতে ৫০ টাকা দাম বেড়ে এখন ৮৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে তাদের।
বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহম্মদ ইউসুফ বলেন, "গত এক সপ্তাতে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে। রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। প্রতিকেজি আমদানি করা রসুন এখন খুচরা বিক্রি করছি ২৩৫ টাকায়।"
ক্রেতা তাজুল ইসলাম বলেন, "গত সপ্তাহে রসুন কিনেছিলাম ২০৫ টাকা কেজি। আজকে কিনলাম ২৩৫ টাকা কেজি।"
মগবাজারের আমবাগানের সবজি বিক্রিতা মোহম্মদ হৃদয় বলেন, "করল্লা ৬০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি সবজির দামই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা করে বেড়েছে।"
মাসুদ হোসেন কারওয়ান বাজার থেকে চিচিঙ্গার কিনেছেন ৬০ টাকা কেজি। তিনি বলেন, "সবজিসহ সব কিছুর দাম বাড়তি। সংসার চালাতে মূল চাকরির পাশপাশি ছুটির দিনেও অন্যর ব্যবসায় সময় দেই। সেখানে কিছু টাকা পাই। এভাবে খুব কষ্টে সংসার চালাচ্ছি।"
এদিকে, সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসেবে গত এক মাসের ব্যবধানে আলু, চাল, ডাল, তেলের দাম বেড়েছে।
মোটা চাল স্বর্ণা/ ইরি চালের দাম ৪ শতাংশ বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকায়। দেশি ডালের দাম ১.৮৯ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। আলুর দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি।
এছাড়া, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ০.৬২ শতাংশ বেড়ে ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।