চট্টগ্রামে কালবৈশাখির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি; ভেঙেছে বসতঘর, সড়কে গাছ
কালবৈশাখি ঝড়ে চট্টগ্রাম নগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ভেঙে গেছে বাড়িঘর। গাছ উপড়ে নগরসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চালাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ঝড়ের কারণে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ইউএস-বাংলা'র একটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামতে না পেরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিদ্যুৎ না থাকায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শুল্কায়ন বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা।
সোমবার (৬ মে) দুপুর ৩টার পর থেকে কালবৈশাখি ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। প্রায় দুঘণ্টা ধরে চলে বৃষ্টিপাত। এ সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় উপড়ে যায় বৈদ্যুতিক খুঁটি।
নগরের ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, চকবাজার, পাঁচলাইশ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে অফিসফেরত কর্মজীবি, শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েন।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ জানান, কলকাতা থেকে চট্টগ্রামগ্রামী ইউএস-বাংলা'র একটি ফ্লাইট দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম অবতরণ করতে পারেনি। সোমবার বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে ফ্লাইটটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এদিকে ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় বড় আকারের বেশ কয়েকটি গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার বিকেলে সীতাকুণ্ড পৌরসভার পন্থিছিলা এলাকায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাছ সরানোর কাজ শুরু করে।
ঝড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। মহাসড়কের একপাশ বন্ধ হয়ে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও উভয় পাশেই বন্ধ হয়েছে যান চলাচল। মহাসড়কের পটিয়া আমজুরহাট, কমলমুন্সির হাট, বাইপাস ও চন্দনাইশের কাঞ্চননগরসহ বিভিন্ন স্থানে এ সমস্যা দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা ইমরান আহমেদ বলেন, 'পরিবারসহ এমইএস কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় একটি বড় গাছ আমাদের সামনে পড়ে যায়। গাছটি আরেকটু হলেই আমার গাড়িকে চাপা দিত।'
সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার টিবিএসকে বলেন, 'কালবৈশাখি ঝড়ে চট্টগ্রাম নগর এবং বিভিন্ন উপজেলায় গাছ উপড়ে ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছি। তবে বাড়িঘর, অবকাঠামোর কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার তথ্য আমরা এখনো পাইনি।'
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চগ্যা টিবিএসকে বলেন, 'সোমবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঝড় এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।'
এদিকে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে দেশের বৃহৎ শুল্ক আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে একঘণ্টা শুল্কায়নসহ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময় কাস্টমস হাউসের সম্মেলন কক্ষে শুল্কায়ন কমিটির একটি সভা চলছিল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে পুরো সভা শেষ করা হয়। এ সময় জেনারেটর ব্যবহার করা যায়নি।
সভায় অংশগ্রহণ করা চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক মো. আশ্রাফুল হক স্বপন বলেন, 'সভা শুরুর কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ চলে যায়, শেষ হওয়া পর্যন্ত আর আসেনি। এ সময় আমরা মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে সভার কাজ শেষ করি। সভা চলাকালীন প্রায় একঘণ্টা জেনারেটরের কোনো সাপোর্ট পাওয়া যায়নি।'