কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: দেশে ফিরতে চান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
কিরগিজস্তানে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন। আজ রবিবারও সেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা সংকটে ভুগছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। তারা দেশে ফিরতে চান।
কিরগিজস্তানের আলা-তু ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এমবিবিএস কোর্সের তৃতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সানজিদা সুরাইয়া আজ রবিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত পরশু দিনের তুলনায় গতকাল হামলা কম ছিল। আজ আবার হামলা হয়েছে। কিরগিজ সরকার বলছে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। এটি সত্য নয়, আজও দু-তিনটি জায়গায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা ভয়ে ভয়ে সময় পার করছি।'
তিনি বলেন, 'আমি এক বান্ধবীসহ ইউনিভার্সিটির বাইরে একটি ফ্ল্যাটে থাকি। আমরা বাইরে বের হতে পারছি না। ভয় ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি।'
অনিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে সানজিদা সুরাইয়া বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে কেবল যে শিক্ষার্থীরাই হামলার শিকার হচ্ছেন তা নয়, বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকরাও দেশটিতে হামলার শিকার হচ্ছেন বলে জানান সানজিদা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।
আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা কিরগিজস্তানকে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়েছে, কিন্তু কেউ গুরুতর আহত হওয়ার সংবাদ আমাদের কাছে আসেনি।'
তিনি বলেন, 'উজবেকিস্তানে অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।'
এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'আমরা তাসখন্দে অবস্থানরত আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে দ্রুত বিশকেকে যেতে বলেছি। দূতাবাস শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিরগিজ সরকারের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ রাখছে।'
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি নম্বরও দেওয়া হয়েছে।
কিরগিজস্তানে বর্তমানে কতজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, গত ১৩ মে বিশকেকে কিরগিজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশরীয় ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। সেই ঘটনার ভিডিও শুক্রবার (১৭ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
এদিকে গত শুক্রবার রাতে কিরগিজ শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি 'সহানুভূতি' দেখানোর অভিযোগ করেন।
পুলিশ গত ১৩ মে হামলার ঘটনায় তিন বিদেশি শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।
উচ্ছৃঙ্খল জনতা যেসব হোস্টেলে হামলা চালিয়েছে, সেগুলোতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা থাকেন।
সানজিদা সুরাইয়া আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিআইপি ডর্মিটরিতে থাকতেন। কিছুদিন আগে তিনি সেখান থেকে অন্য একটি এলাকায় গিয়ে উঠেছেন। গত শুক্রবার ওই ডর্মিটরিতেও হামলা হয়।
সানজিদা বলেন, 'ভিআইপি ডর্মিটরিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। মেয়েদের ওপরও হামলা হয়েছে। পাকিস্তানের দুই-তিনজন ফেলো হামলায় আহত হয়েছেন। এছাড়াও পুরো কিরগিজস্তানজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় রাতভর হামলা হয়েছে। ডর্মিটরির বাইরে যারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন, তাদেরও ওপরও হামলা হয়েছে।'