আজ রাত থেকেই উপকূলে পড়তে শুরু করবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব
আগামীকাল রোববার (২৬ মে) ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ও সরকারের পক্ষ থেকেও এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, "আগামীকাল দুপুরের পরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল সরাসরি আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে। সেই সাথে ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাত হবে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব আজ রাত থেকেই উপকূলীয় এলাকায় পড়তে শুরু করবে। আগামীকাল সকালের আগেই হয়ত ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। "
ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান বলেছেন, রোববার ভোর থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সন্ধ্যায় পুরোপুরি আঘাত হানবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এজন্য আজ রাতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হবে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও উপকূলে ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজ শনিবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় নেওয়া প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, "রিমালের আঘাতে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার উপকূল অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এজন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি রয়েছে।"
"আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে আমরা ঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি। রাত ১২টা-১টা নাগাদ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি হতে পারে। এমন একটা সম্ভাবনা রয়েছে।"
"গত ১৫ বছরে ঘূর্ণিঝড়সহ সকল দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনায় আমরা যথাসময়ে প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের দুর্দশা লাঘব এবং জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়েছি। এই ঘূর্ণিঝড়টিও যাতে একই ধারাবাহিকতায় সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি তার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি" যোগ করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ২৪ ঘন্টা খোলা রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম প্রেরণ শুরু করেছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক গত কয়েকদিন যাবত মাঠে আগাম সতর্কবার্তা প্রচারসহ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন ও প্রস্তুতের কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এন্টিসিপেটরি অ্যাকশন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও সাইক্লোন আর্লি অ্যাকশন প্রটোকল অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আগাম কার্যক্রম শুরু করেছে এবং মন্ত্রণালয়কে টেকনিক্যাল উপদেশ দিচ্ছে।
মুহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থা সম্বন্ধে সরেজমিনে অবহিত হতে আমি গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর পরিদর্শন করেছি। আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাব্য গতিপথ, প্রভাব, ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে আমাকে বিস্তারিত ব্রিফিং করেছে। এরপর মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্বন্ধে জানতে সিপিপি প্রধান কার্যালয় ও অপারেশন সেন্টার পরিদর্শন করেছি এবং ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সরাসরি ১৭৪টি মাঠ কার্যালয়কে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
এর মধ্যে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সাথে কথা বলে স্থানীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উপকূলবর্তী সকল জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এপর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও সম্ভাব্য ভূমি অতিক্রম এলাকার ভিত্তিতে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলাসমূহকে অধিকতর প্রস্তুত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক বিপদ সংকেত জারি করা মাত্র মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসমূহ কার্যকর হয়েছে।
শনিবারের সভায় যেসব বিষয় নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে:
ক) আগাম সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও জনগণকে সচেতন করা
খ) আগাম মানবিক কার্যাবলী গ্রহণ করা
গ) মাঠ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসমূহের সভা অনুষ্ঠান
ঘ) সকল পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা
ঙ) আশ্রয়কেন্দ্রসমূহ প্রস্তুত করা
চ) আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করা
ছ) জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনয়নের বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ
জ) বেড়িবাঁধ, ফসল, গবাদি পশু, মৎস্য ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি রোধে আগাম ব্যবস্থা
ঝ) বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া এবং দুর্যোগ তথ্য পাওয়ার জন্য টোল ফ্রি ১০৯০ ব্যবহার
ঞ) ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ ইত্যাদিসহ অন্যান্য জরুরি সেবা অব্যাহত রাখা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ইত্যাদি।