বকেয়া পাওনার জন্য বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ত্রিপুরা
ভারতের ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড (টিএসইসিএল) থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের কাছে ১০০ কোটি রুপি বকেয়া পাওনার কারণে কোম্পানিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ভারত থেকে ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভেড়ামারা এইচভিডিসির মাধ্যমে ১,০০০ মেগাওয়াট এবং টিএসইসিএলের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে টিএসইসিএল চুক্তির তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
দেশে আমদানিকৃত বিদ্যুতের লোড ম্যানেজমেন্ট করা হয় ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে। এটি পরিচালনা করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ২৫ মে ত্রিপুরার টিএসইসিএল সর্বোচ্চ ৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। আগেরদিন ২৪ মে সর্বোচ্চ সরবরাহ ছিল ৮৪ মেগাওয়াট। ২৩ মে সর্বোচ্চ ৯২ মেগাওয়াট, ২২ মে সর্বোচ্চ ৮৮ মেগাওয়াট এবং ২১ মে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে টিএসইসিএল। গত তিন মাসে একদিনে সর্বোচ্চ ১৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে টিএসইসিএল।
টিএসইসিএলের দাবি, বাংলাদেশের কাছে তাদের বকেয়া পাওনার পরিমাণ ১০০ কোটি রুপি। সে কারণে তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
টিএসইসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেবাশীষ সরকার ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, টিএসইসিএল তাদের বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। এমনকি অর্থ পেতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে দেখাও করেছে তাদের প্রতিনিধি। বকেয়া অর্থের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে টিএসইসিএল। বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় টিএসইসিএলের বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থাপনায় প্রভাব পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
দেবাশীষ সরকার আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হওয়ায় হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা যায় না। এজন্য সরবরাহ সীমিত করা হয়েছে। এর মূল কারণ সময়মতো অর্থ না পাওয়া। নিয়মিত বিদ্যুতের দাম পাওয়া গেলে টিএসইসিএলের রাজস্ব আয় আরও ভালো থাকত। কিন্তু কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ জানুয়ারিতে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দাম পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান ২৫ টিবিএসকে বলেন, ত্রিপুরার বকেয়া আগের তুলনায় কমেছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে ত্রিপুরার বিদ্যুৎ কোম্পানি বকেয়ার কারণে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কথা বললেও প্রকৃত কারণ তা বলে মনে করেন না তিনি।
সচিব বলেন, 'ত্রিপুরার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। তাদের (ত্রিপুরার) অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে রপ্তানি করার মত বিদ্যুৎ বিশেষ থাকছে না। যে কারণে সরবরাহ কমিয়েছে তারা। বকেয়া এক্ষেত্রে মূল কারণ নয়।'
বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম টিবিএসকে বলেন, 'বেশ কিছুদিন ধরে ত্রিপুরা থেকে চুক্তির তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক মাস গড়ে ৯০ মেগাওয়াট থেকে ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ত্রিপুরা। তাদের বকেয়া পাওনা ছাড় করলে একটু বেশি সরবরাহ করে।'
ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ কম পাওয়ার কারণে লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চুক্তির তুলনায় ত্রিপুরার সরবরাহে যতটা ঘাটতি থাকে, সেটা খুবই কম। ফলে এতে লোডশেডিং ম্যানেজমেন্ট সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শুধু ত্রিপুরার টিএসইসিএলের পাওনা নয়, বিপিডিবি দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি, ভারতের অন্য সরকারি বিদ্যুৎ এবং দেশটির বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ারের পাওনাও সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না।
তারা বলেন, সরকার বা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড যে দামে বিদ্যুৎ কেনে, বিক্রি করে তার চেয়ে কম দামে। কেনা ও বিক্রি দামের ঘাটতির অংশটুকু সরকার ভর্তূকি হিসেবে দিয়ে থাকে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতের ভর্তূকি বাবদ ৩৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ না হওয়ায় সরকার ভর্তূকির অর্থ সময়মতো ছাড় করতে পারছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের কাছে পিডিবির বকেয়া থেকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি সরবরাহকারীদের কাছে পিডিবির বকেয়া প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
এ সমস্যার সমাধানে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তূকি সমন্বয়ের পরিকল্পনা করছে। জানা গেছে, এখন থেকে প্রতি তিন মাসে একবার করে বিদ্যুতের দাম বাড়াবে সরকার।