বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন নিরাপদ-সুশৃঙ্খল করতে ইতালি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে নির্বিঘ্নে অভিবাসনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টির কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভুয়া কাগজপত্রসহ ভিসা আবেদন এবং মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের অবৈধ অর্থ লেনদেনের চর্চা।
গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রোমে আমাদের কর্তৃপক্ষ এবং দূতাবাস বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে অভিবাসনকে আরও নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।'
রাষ্ট্রদূত সবাইকে বিশ্বস্ত অংশীদারদের ওপর আস্থা রাখতে উৎসাহিত করেন। একইসঙ্গে অভিবাসী ও শ্রমিকদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা কোথায় কাজ করতে যাচ্ছেন, কোন ধরনের কাজ, কোন পরিস্থিতিতে এবং ইতালির কোন শহরে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম দেশ ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী আকর্ষণ হতে পারে। এটি ইতালির কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে এবং ২০২২ সালে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরো আহরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
ভিসা প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো বলেন, তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতি পাঁচটি আবেদনের মধ্যে একটিতে সমস্যাযুক্ত ও প্রয়োজনীয় নথির ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, 'ইতালিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে মধ্যস্থতাকারীদের অনেক বেশি টাকা দেওয়ার প্রচলন আছে। এটি আসলে ইতালি এবং বাংলাদেশে একটি অবৈধ অনুশীলন।'
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, 'অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীরা এ অর্থ দেন এবং তারা জানেন না যে অর্থ কোথায় যাচ্ছে, তারা কী ধরনের কাজ করতে যাচ্ছেন এবং কোন সংস্থায় নিযুক্ত হতে যাচ্ছেন। তাই এই চর্চা বন্ধ করতে হবে। আর এটাই আমাদের ধীরগতির মূল কারণ। আর এটাই বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে আমাদের অভিবাসনে সমস্যা হওয়ার মূল কারণ।'
তিনি বলেন, 'ওয়ার্ক ভিসা একটি ক্যাটাগরির এবং অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসা রয়েছে- ট্যুরিস্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, স্টাডি ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা ইত্যাদি ক্যাটাগরির সংখ্যাও বাড়ছে।'
রাষ্ট্রদূত বলেন,'এই সবকিছু আমাদের দূতাবাসের ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করছে এবং এটি বিলম্বের ফলও বটে। কারণ কাজের ভিসা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই অন্যান্য বিভাগগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ভিসা অফিসকে সকল বিভাগের জন্য কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি স্বীকার করছি বিলম্ব হয়েছে এবং অবশ্যই আমরা এই বিলম্বের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি।'
তিনি বলেন, 'আবেদনকারীদের তাদের অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কাউকে তাদের অর্থ দেওয়ার সময় সতর্ক হওয়া উচিত এবং তাদের কেবল সরকারি সংস্থাগুলোর উল্লেখ করা উচিত। একইসঙ্গে মধ্যস্থতাকারী এবং দালালদের এই বিশাল পরিমাণ অর্থ দেওয়া এড়ানো উচিত।'
তিনি বলেন, 'ভিসা প্রক্রিয়াকরণের জন্য আমাদের অফিসিয়াল এজেন্সি হলো ভিএফএস গ্লোবাল। ভিসা আবেদনের জন্য নথি সংগ্রহের জন্য একমাত্র তারাই অনুমোদিত। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার অসুবিধার জন্য ভিএফএসের ত্রুটি নেই এমন অনেক কথা হয়েছে।'
আলেসান্দ্রো বলেন, তারা প্রতিদিন যে সংখ্যক আবেদন গ্রহণ করতে পারেন, তার একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
তিনি আরও বলেন, 'অন্যথায় আমরা এটি প্রক্রিয়া করতে পারি না। আর সে কারণেই নির্দিষ্ট সংখ্যা বা সীমা থাকায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া মুশকিল। আর অবশ্যই এই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অনেকে ঢুকতে পারে না।'
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ইতালির ভিসা সিস্টেম পাসপোর্টের সঙ্গে কাজ করে এবং আবেদনকারী ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে পাসপোর্টটি জমা দেন। এরপর ভিএফএস গ্লোবাল এই আবেদনপত্র ও পাসপোর্ট দূতাবাসে নিয়ে আসে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'এখন আমরা আর পাসপোর্ট রাখছি না। এটি একটি ছাড় যা আমাদের সদর দপ্তর বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। তাই ওয়ার্কিং ভিসার জন্য আবেদনকারীরা এখন শুধু পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দেন। তারা পাসপোর্টটি তাদের সঙ্গে রাখেন, যাতে তারা ভ্রমণ করতে পারেন এবং পাসপোর্টটি অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারেন। আমরা এখন ভাবছি দূতাবাসে এই মুহূর্তে আমাদের যে পাসপোর্ট আছে, সেগুলো নিয়ে কী করা যায়।'
তিনি বলেন, 'ইতালিতে প্রবেশ বলতে কর্মরত অভিবাসীর জন্য চারটি পদক্ষেপ পার করতে হয়। এর প্রথমটি হলো একটি কোম্পানির স্পন্সরশিপ। দ্বিতীয়ত ওয়ার্ক পারমিট, দূতাবাসের ভিসা এবং সবশেষ হলো দেশটিতে প্রবেশ ও সীমান্তে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ। যারা স্পন্সরশিপ ও ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে দুই ধাপ সম্পন্ন করেছেন, তারা ইতালি যাবেন কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। আসলে ভুয়া স্পন্সরশিপ ও ওয়ার্কিং পারমিটসহ নানা কারণে তাদের অনেককেই বাতিল করা হয়। তাই চার ধাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ইতালিতে প্রবেশ নিশ্চিত নয়।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'ইতালিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্রমেই সুসংহত হচ্ছে। ইতালিতে বাংলাদেশিদের কমিউনিটি একটি উপযুক্ত সম্প্রদায়, কারণ তারা কিছুদিন পরে নিজেদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন এবং তারা স্থায়ীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। এসবই এই সম্প্রদায়কে সফল করে তুলেছে। অনেক উদ্যোক্তা এবং তরুণ প্রজন্ম ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেছে। সুতরাং এটি একটি খুব সফল সম্প্রদায় এবং আমাদের এটির উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত এবং অবৈধ পন্থা থেকে দূরে তা নিশ্চিত করা উচিত।'