বারিধারায় পুলিশের গুলিতে পুলিশ নিহত: কনস্টেবল কাওসার ৭ দিনের রিমান্ডে
রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনে সহকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল কাওসার আলীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ রোববার (৯ জুন) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহাম্মদ এই আদেশ দেন।
এর আগে আজ সকালে কাওসারকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলার সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৮ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। নিহত পুলিশ সদস্য ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়া এই ঘটনায় সাজ্জাদ হোসেন নামে জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালক আহত হন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (৯ জুন) গুলশান থানায় মামলা করেছেন নিহত মনিরুল হকের ভাই মো. মাহাবুবুল হক। এতে কনস্টেবল কাওসার আলীকে আসামি করা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, কাওসারকে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত মনে হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। তার গত ১৫ দিনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি যাদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, যাদের সঙ্গে থেকেছেন, তাদের সঙ্গে তদন্তকারীরা কথা বলবেন।
পুলিশের ইনসিডেন্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, কনস্টেবল কাওসার আহমেদ সাব মেশিনগান দিয়ে দুটি ম্যাগাজিনের ৩৮ রাউন্ড গুলি চালান। কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের দেহ তাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'কনস্টেবল কাওসার সাব মেশিনগান এসএমটি-৯ দিয়ে কনস্টেবল মনিরুলের দেহে গুলি করেন। গুলি করার সময় তার অস্ত্রের একটা ম্যাগাজিন খালি হয়ে গেলে আরেকটি ম্যাগাজিন লাগিয়ে গুলি করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনের পুলিশ বক্সে কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম সাড়ে ৩ মাস এবং কনস্টেবল কাওসার আহমেদ ১ বছর ১০ মাস ধরে কর্মরত ছিলেন।'
ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাওসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল। প্রতিটা ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে।'
তিনি বলেন, 'এ ঘটনায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ব্রাজিলীয় কোম্পানি টরাস আর্মসের তৈরি। প্রায় ১২ বছর আগে টরাস এসএমটি পুলিশের হাতে আসে। সাধারণ দায়িত্বে এ ধরনের অস্ত্র পুলিশের হাতে দেখা না গেলেও কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশকে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও দেওয়া হয়।'
ওসি জানান, 'নিহত মনিরুলের কাছে চায়নিজ রাইফেল ছিল। সেটা ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ, পাল্টা গুলি করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি বা সুযোগই পাননি।'
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার পর পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ও কাওসার আলীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই কনস্টেবল মনিরুলকে এলোপাতাড়ি গুলি করেন কাউসার। বুকে গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে থাকা জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ শেখও আহত হয়েছেন।