নাফ নদীতে নৌযান লক্ষ্য করে গুলি: বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিনে যাত্রী-পণ্য পরিবহন কাল থেকে
নাফ নদীতে বাংলাদেশি নৌযান লক্ষ্য করে মিয়ামনারের অজ্ঞাত সশস্ত্র গোষ্ঠীর কয়েক দফায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় বাধ্য হয়ে বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে যাত্রী ও পণ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট থেকে গত ৫, ৮ ও ১১ জুন তিন দফায় বাংলাদেশি জলসীমায় চলা নৌযান লক্ষ্য করে গুলি চালায় মিয়ানমারের একটি অজ্ঞাত সশস্ত্র গোষ্ঠী।
এর ফলে গত সাতদিন ধরে টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেন্টমার্টিন খাদ্যসংকটের মুখে থাকায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে যাত্রী, ও পণ্য পরিবহন শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) থেকে।
বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান চালাচল বন্ধ থাকায় প্রবাল দ্বীপটিতে খাদ্যপণ্য সংকট তৈরি হচ্ছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে মানুষ দ্বীপ ছেড়ে যেতে পারছেন না।
'এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়ার জেটিঘাট থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে পণ্যবাহী ট্রলার যাবে সেন্টমার্টিনে। একইসঙ্গে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে নতুন চ্যানেলে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সীমিতভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে,' বলেন তিনি।
দ্বীপের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টেকনাফের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের অজ্ঞাত একটি অস্ত্রধারী গোষ্ঠী। এটি টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌপথে ট্রলার বা স্পিডবোট দেখলেই তা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করছে।
গতকাল মঙ্গলবার সেন্টমার্টিনমুখী একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট লক্ষ্য করে তৃতীয় দফায় গুলি চালায় গোষ্ঠীটি।
সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও দ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, 'নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থানরত সশস্ত্র দলটি পাঁচজন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে যাওয়া স্পিডবোটে ১০–১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।'
'৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনি সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি,' তিনি আরও বলেন।
এছাড়া ৮ জুনও আরেকটি পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি চালানো হয়। এসব গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত না হলেও গুলির শিকার একাধিক নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার (১১ জুন) টিবিএসকে বলেন, 'সেন্টমার্টিন–টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।'
[পরিস্থিতির] সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হবে উল্লেখ করে তিনি বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ডের জাহাজযোগে খাদ্যপণ্য পরিবহনের দাবি জানান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, বঙ্গোপসাগর হয়ে শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার বিকল্প পথ নিয়ে গত রোববার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়।
গুলিবর্ষণের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবহিত করেছে বলেও জানান তিনি।