চট্টগ্রামে কর্পোরেট খামার: কোরবানির পশুর হাটে নতুন যুগের সূচনা
তিন দশক আগে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম-ভিত্তিক গবাদিপশুর খামার নাহার অ্যাগ্রো কর্পোরেট, খামার করার ক্ষেত্রে অনেকটা অনুকরণীয় মডেলে রূপ নিয়েছে। শখ থেকে করা গরুর খামারটি এখন এলাকায় গবাদিপশুর বাজারে বেশ জনপ্রিয়।
সারা বছরের পাশাপাশি ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে খামার ভিত্তিক বাজারগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। গরুর হাটের ঝামেলা পোহানো থেকে বাঁচতে শিশু বা পরিবারের নারী সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এসে কর্পোরেট গরুর খামার থেকেই কোরবানির জন্য পশু কিনছেন অনেকে।
নাহার অ্যাগ্রোর পরিচালক তানজীব জাওয়াদ দ্য বিজেনস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এ বছর ৪৮০টি গরু তোলা হয়েছে। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশই বিক্রি হয়ে গেছে।
"এক লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে আমাদের খামারে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা রাখে মানুষ। সুনামের কারণে ভালো গরুই বিক্রি হয় এখানে। এছাড়া দামও তুলনামূলক কম," বলেন তিনি।
বর্তমানে চট্টগ্রামের ২০টি শিল্পগোষ্ঠী, শিল্প, ট্রেডিং, ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত পরিবারের সদস্যরা কর্পোরেট খামারে নাম লিখিয়েছেন। এসব ফার্ম থেকে বছরে ৫ হাজারেরও বেশি গরু বিক্রি হয়। গত ৫-৬ বছর ধরে কর্পোরেট খামার থেকে কোরবানির গবাদিপশুর ক্রয়ের প্রবণতা বাড়ছে। শহরতলীতে খামার স্থাপন করলেও ক্রেতা চাহিদার কারণে নগরীরতে বিক্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।
এখানে যুক্ত হয়েছে— টিকে গ্রুপ, আবল খায়ের গ্রুপ, এশিয়ান অ্যান্ড ডাফ গ্রুপ, শাহআমানত গ্রুপ, চৌধুরী গ্রুপ, আরএমডি গ্রুপ, ওয়েল গ্রুপ, শেঠ গ্রুপ, কন্টিনেন্টাল গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান।
এশিয়ান অ্যাগ্রোর পরিচালক ওয়াসিফ সালাম টিবিএসকে বলেন, "বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে শিক্ষিত তরুণরা এখন খামার শুরু করছেন। ভালো মানের গরু উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। ৬-৭ বছর আগেও কটু কথা শুনতে হতো আমাদের। এখন দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে।"
তিনি জানান, এশিয়ান অ্যাগ্রোতে এবার ২০০টি গরু তোলা হয়েছে। বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। প্রচুর মানুষ গরু দেখতেও আসেন। আর শহরে গরু রাখার ব্যবস্থা সবার নেই। এজন্য মানুষ গরু কিনে কর্পোরেট খামারেই রাখছেন। ফলে আলাদা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। গুণগত মান ও রাখার সুবিধার কারণে মানুষ কর্পোরেট খামার থেকে গরু কিনছেন অনেকে।
শাহআমানত অ্যাগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ হোসেন জ্যাকি টিবিএসকে জানান, পারিবারিক ব্যবসা শাহআমানত অয়েল মিল, আমদানি, ট্রেডিং ব্যবসার বাইরে শখ থেকে খামার শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে ১০০টি গরু রয়েছে। বেশিরভাগ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তার ব্যবসায়ে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকা।
শিপিং খাতের প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলিফ চৌধুরী ২০১৮ সালে শখের বসে ৬০টি গরু দিয়ে সারা অ্যাগ্রো শুরু করেন।
তিনি জানান, গত কোরবানির মৌসুমে এই খামার ৪৫০টি গরু বিক্রি হয়েছিল। এ বছর ব্রিডিংয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে ২৫০টি গরু তুলেছেন খামারে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। একটি প্রজনন খামারসহ দুটি খামারের মোট ২০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
খাতুনগঞ্জের আমদানি-রপ্তানি ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান ওয়াল্ড ইমপোর্ট অ্যান্ড সাপ্লাইস দেখাশোনার পাশাপাশি ২০২১ সালে ওজি অ্যাগ্রো নামে গরু খামার শুরু করেছিলেন তানভীর কালাম।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার পর শখ থেকে ২১টি গরু দিয়ে কর্ণফুলী উপজেলায় খামার শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার খামারে ৯৭টি গরু রয়েছে। বিনিয়োগের পরিামাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। গরুর পাশাপাশি দৈনিক ২৫০ লিটার দুধ আসে তানভীরের খামার থেকে।