ঈদের দিন বিকাল পর্যন্ত ৪০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া প্রবেশ করেছে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে
ঈদুল আজহার প্রথম দিনে (১৭ জুন) বেলা ১২টার পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে শুরু করেছে ঢাকার সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে।
এদিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, বিকাল পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিল্প নগরীতে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ টিবিএসকে জানান, দুপুর থেকে কাঁচা চামড়া ট্যানারিতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ঈদের প্রথম দুই দিনে প্রায় ৫ লক্ষ পিস চামড়া শিল্প নগরীতে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
বিকালে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী ঘুরে দেখা যায়, দুপুর থেকে কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করায় ব্যস্ত সময় পার করছে শিল্প নগরীতে অবস্থিত ট্যানারিগুলো।
রুপা রাম নামে একটি কারখানার একজন শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, ট্যানারিতে কাঁচা চামড়া প্রবেশের শুরুর পর থেকে ব্যস্ততাও বেড়েছে তাদের। চামড়া আসার সাথে সাথেই সেগুলো সংরক্ষণে তাৎক্ষণিকভাবে চামড়াগুলো লবণজাত করছেন তারা।
ট্যানারিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকাল পর্যন্ত শিল্প নগরীতে প্রবেশ করা কাঁচা চামড়াগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে আসা।
একটি পিকআপে তিনশ পিস কাঁচা চামড়া নিয়ে ট্যানারি আসা রাসেল শেখ বলেন, 'এর আগে আরও একটি পিকআপবোঝাই চামড়া নিয়ে এসেছি। সব মিলিয়ে আজ ৯০০ পিসের মতো চামড়া আমরা নিয়ে আসব।'
চামড়ার দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দাম নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।'
বিসিক শিল্প নগরীর শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এক কর্মচারী টিবিএসকে বলেন, 'সর্বপ্রথম বেলা ১২টা ৫৮ মিনিটে প্রথম একটি ট্রাক ৩০০ পিস চামড়া নিয়ে শিল্প নগরীতে প্রবেশ করে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত শুধু শিল্প নগরীর মূল ফটক দিয়ে সর্বমোট ৩২ হাজার পিস চামড়া শিল্প নগরীতে প্রবেশ করেছে।'
এদিকে মো. সাখাওয়াত উল্লাহ টিবিএসকে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে চাপ বাড়বে। আজ দিনে মোট কতগুলো চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে, তা কাল জানানো সম্ভব হবে।
এছাড়াও চামড়ার নতুন নির্ধারিত দাম কিংবা লবণ ও রাসায়নিক নিয়েও কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, 'ট্যানারিগুলোতে পর্যাপ্ত রাসায়নিক রয়েছে, রয়েছে পর্যাপ্ত লবনের সরবরাহও। কাজেই আপাতত সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। ট্যানারিগুলো নির্ধারিত দামেই চামড়া ক্রয় করছে।'
বিসিক চামড়া শিল্প নগরী থেকে বিকালে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিসিক চেয়ারম্যান জানান, চামড়ার গুণগত মান নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া যেন ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিসিকের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, 'প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মোট ১ কোটি ৭ লক্ষ পশু কোরবানি হতে পারে, যার চামড়া সংরক্ষণে ১ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন। গত ৬৩ বছরের ইতিহাসে দেশে এবার সর্বোচ্চ ২৪ লক্ষ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে।
'অন্যদিকে আমরা চামড়া সংরক্ষণে ১.৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করেছি। অর্থাৎ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন বেশি লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। কাজেই লবন নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এর পরেও যদি লবণ প্রয়োজন হয়, আমাদের লবণ সেল তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ করবে।'
এ সময় এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শিল্প নগরীর সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটিও ঢেলে সাজানো হয়েছে জানিয়ে বিসিকের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'শুধু এই ঈদকে কেন্দ্র করে এ বছর আমরা সিইটিপিতে বেশ কিছু আপগ্রেডেশন করেছি।'
এছাড়াও প্রথম ৭ দিন কোনোভাবেই যেন ঢাকার বাইরের চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার পাশাপাশি চামড়াবাহী গাড়ি যেন নির্বিঘ্নে শিল্প নগরীতে প্রবেশ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।