এবারও ঈদের ছুটিতে বন্দর চালুর সুফল মেলেনি
বিগত বছরের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দর খোলা রাখার সিদ্ধান্ত, তেমন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। ছুটিকালীন শেষ দুই দিন একটি কন্টেইনারও ডেলিভারি হয়নি। ছুটির প্রথম দিন ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ৩৮৯ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইইউনিট) কন্টেইনার।
এর আগে, গত ঈদ-উল-ফিতর এবং পহেলা বৈশাখের ছুটিতেও শতভাগ চালু ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। ওই সময়েও আশানুরূপভাবে কন্টেইনার ডেলিভারি হয়নি। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদ-উল-ফিতরের দিন ডেলিভারি হয়নি একটি কন্টেইনার; এছাড়া, অন্যান্য ছুটির দিনে ডেলিভারি নেমে এসেছিল ১,০০০ টিইইউ-এর নিচে।
আগের বছরগুলোতেও একই রকম পরিস্থিতি দেখা গেছে।
জানা যায়, ঈদুল আজহার ছুটিতে বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে বিজিএমইএ'র প্রতি বিশেষ নির্দেশনা ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের। সুফল পেতে বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে দুটি মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছিল।
তবে এতসব উদ্যোগ, সমন্বয়, আয়োজনের পরেও বন্দর খোলা রাখার সুফল মেলেনি।
এর ফলে ঈদের ছুটির তিনদিন আগ থেকে ছুটিকালীন সময়, অর্থাৎ ছয় দিনে বন্দর ইয়ার্ডে জমেছে অতিরিক্ত ৪,০৮৮ টিইইউ কন্টেইনার। বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউ।
১৪ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩১,১২৪ টিইইউ। ১৯ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার রয়েছে ৩৫২১২ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিবছরের মতো এবারও চালু ছিল বন্দর। সুফল পেতে এবার বিশেষ নির্দেশনা ছিল বন্দরের স্টেক হোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি। আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় এর সুফল পাওয়া যায়নি। তবে একদিন প্রায় বন্ধ থাকলেও ছুটির পরবর্তী দুই দিন জাহাজ থেকে কন্টেইনার উঠানামা কিছুটা স্বাভাবিক ছিলো।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, "বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি দিতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। স্টেকহোল্ডারদের প্রতি এবার বিশেষ নির্দেশনাও ছিল। কিন্তু আমদানিকারকরা ডেলিভারি নেননি।"
"আশা করছি ছুটি শেষে ডেলিভারির অপেক্ষায় থাকা কন্টেইনারগুলো দ্রুত বন্দর থেকে ছাড় করবেন আমদানিকারকরা," বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারির হিসাব ধরা হয় আগের দিন সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত। উদাহারণস্বরূপ— ১৯ জুনের কন্টেইনার ডেলিভারির হিসাবটি ১৮ জুন সকাল ৮টা থেকে ১৯ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ের।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। গড়ে কন্টেইনার ডেলিভারির সংখ্যা ৪,৫০০ টিইইউ।
বন্দরের কন্টেইনার ডেলিভারির তথ্য অনুযায়ী— ১৪ জুন ৫৩৬০ টিইইউ, ১৫ জুন ৩০৯৯ টিইইউ, ১৬ জুন ২২৩৯ টিইইউ এবং ১৭ জুন ৩৮৯ টিইইউ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে। তবে এরপরের দুইদিন ১৮ জুন ও ১৯ জুন ডেলিভারি হয়নি কোনো কন্টেইনার।
ঈদের আগে স্টেকহোল্ডারদের পাঠানো একটি চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, গত কয়েকটি ঈদে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত জনবল নিয়োজিত রেখে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখলেও বিজিএমইএ'র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ ঈদের আগে ও পরে কার্যক্রম বন্ধ রাখে। এর ফলে বন্দর থেকে কাঙ্খিত হারে আমদানীকৃত এফসিএল কন্টেইনার ও এলসিএল কার্গো ডেলিভারি হয়নি। এতে বন্দর হতে পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় পণ্যের জট সৃষ্টি হয়। ফলে ঈদের ছুটি পরবর্তী সময়ে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে এবং বন্দরের উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হয়।
বিজিএমইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "ঈদের ছুটিতে রপ্তানি পণ্যের শিপমেন্ট স্বাভাবিক থাকলেও আমাদনি পণ্য চালান ডেলিভারি নেয়নি গার্মেন্টস মালিকরা। তবে বন্দরে যে পরিমাণ আমদানি পণ্য চালান আটকে গেছে, সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি নেওয়া হবে।"
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ কন্টেনার হ্যান্ডলিং বা জাহাজে ওঠানামা হয়। ঈদের দিন কোনো রপ্তানি কন্টেইনার জাহাজে উঠেনি। ঈদের দিন জাহাজ থেকে শুধুমাত্র আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নামানো হয় ৩৪৭ টিইইউ। ঈদের পরদিন জাহাজে আমদানি এবং রপ্তানি কন্টেইনার উঠানামা হয় ৮২৭৪ টিইইউ।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, "বন্দর চালুর সুফল পেতে হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালুর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"