বে টার্মিনাল প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের লক্ষ্যে রোববার অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সরকার
বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম বে টার্মিনাল প্রকল্প আবারও মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশী বিনিয়োগে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের মাঝামাঝি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
রোববার (১০ নভেম্বর) এ বিষয়ে একটি বৈঠক আয়োজন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বৈঠকে বিনিয়োগকারী সংস্থা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য অংশীদাররা উপস্থিত থাকবে।
এছাড়া, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন বৈঠকে অংশ নেবেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) দেলোয়ারা বেগম টিবিএসকে বলেন, আগামী ১০ নভেম্বর প্রকল্পের অংশীদারদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ, পিপিপি কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। প্রকল্পটি কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, এ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে, গত মাসে পিপিপি কর্তৃপক্ষ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রকল্পটির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে পিপিপি কর্তৃপক্ষ তাগাদা দেয় বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চ্যানেল ও ব্রেকওয়াটার নির্মাণে বিশ্বব্যাংক গত জুনে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিলেও, প্রকল্পের ধীর অগ্রগতি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। একটি বিনিয়োগকারী সংস্থার একজন নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "যদি সরকার ইতিবাচক অবস্থান নেয়, তবে বিনিয়োগকারীদের সাথে চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং প্রকল্পের কাজ শুরু করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখনও প্রকল্পটি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান সম্পর্কে অনিশ্চিত। যেখাবে প্রকল্পটি আগাচ্ছিলো, তাতে প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি বছরের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিলো। আমরা আশা করছি, প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে।"
সীকম গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিরুল হক টিবিএসকে বলেন, "বে টার্মিনাল প্রকল্পে সাইনবোর্ড লাগানো আর বিগত সরকারের প্রোপাগান্ডা ছাড়া, আর তেমন কোন উন্নতি হয়নি। গত ১০ বছর ধরে এই প্রকল্প নিয়ে নানা টালবাহানা হয়েছে। প্রতিবছর প্রকল্পের কাজ শুরু করা নিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।"
বন্দরের ধারণক্ষমতার তুলনায় কনটেইনারের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে ২০১৪ সালে বে টার্মিনাল প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় সরকার।
আমিরুল হক আরও বলেন, "বে টার্মিনালের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে অপ্রয়োজনীয় কর্ণফুলী টানেল করা হয়েছে। অথচ দেশের মেরিটাইম সেক্টরের অগ্রাধিকার প্রকল্প হয়েও, বে টার্মিনালের কোন অগ্রগতি হয়নি। এই প্রকল্পের দ্রুত অগ্রগিত হওয়া প্রয়োজন।"
তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, প্রকল্পটির জন্য বন্দর ব্যবহারকারীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পাবলিক হিয়ারিং হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, "কোন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি না করে দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা প্রয়োজন।"
বর্তমানে ১০ মিটার গভীরতা এবং ২০০ মিটারের চেয়ে বড় দৈর্ঘ্যের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। তবে বে টার্মিনাল নির্মিত হলে ১২ মিটার গভীরতা এবং ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ সেখানে নোঙর করতে পারবে।
এছাড়া, জোয়ারের ওপর নির্ভর না করেও জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। প্রকল্পটি শেষ হলে, ৬ হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজও নোঙর করতে পারবে। বর্তমানে বন্দর জেটিতে সর্বোচ্চ ২ হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ঢুকতে পারে।
প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, বে টার্মিনাল প্রকল্পে চারটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর জন্য আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ (এডি পোর্ট) এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এডি পোর্ট গ্রুপ ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এডি পোর্টের স্থানীয় এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফাজ্জল রুহুল আমিন টিবিএসকে বলেন, "দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে বে টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করি, ট্রানজেকশন এডভাইজারের [লেনদেন পরামর্শক] প্রতিবেদন এবং পরবর্তী কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা, প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"
এছাড়া, বে টার্মিনাল প্রকল্পের অধীনে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে পিএসএ সিঙ্গাপুর কনটেইনার টার্মিনাল-১ নির্মিত হবে। একইভাবে, আরও ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ডিপি ওয়ার্ল্ড কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মিত হবে । লিকুইড কার্গো টার্মিনালের জন্য ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ও তাদের বিদেশি সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।
ইস্ট কোস্ট গ্রুপ অয়েল, এলপিজি, এলএনসি খালাসে টার্মিনাল নির্মানের পাশাপাশি ১ লাখ টন এলপিজি, ৭৫০ এমএমসিএফডি এলএনজি, ৫০,০০০ টন ডিজেল এবং ২৫,০০০ টন জেট ফুয়েলের রিজার্ভ [মজুত] সক্ষমতা গড়ে তুলতে চায়।