৩৩ বছর পর আর্মি, পুলিশের রেশনের চাল ও গমের দাম বাড়লো ৮০০%
বাংলাদেশ পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে রেশন সামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিকেজি চাল ও গমের বিক্রয়মূল্য কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে, এখন থেকে রেশনের চাল ও গমের দাম হবে এই দুটি পণ্যের অর্থনৈতিক মূল্যের ২০ শতাংশ। এতে প্রতিকেজি রেশনের চালের দাম হবে পড়বে ১১ টাকা এবং আটার কেজি হবে ১২ টাকা।
বর্তমানে প্রতিকেজি রেশনের চাল ও গমের মূল্য প্রতিষ্ঠানভেদে ১.০৯ টাকা থেকে ১.৮০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, দুটি পণ্যের দাম ৮০০% বাড়ছে।
অর্থবিভাগের বাজেট উপসচিব নূরউদ্দিন আল ফারুক স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, চাল ও গমের বিক্রয়মূল্য হবে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের চাল ও গমের নির্ধারিত অর্থনৈতিক মূল্যের ২০%। অর্থবিভাগ হতে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে।
এর আগে, ১৯৯১ সালে সরকার সর্বশেষ রেশন পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছিল।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার কাছে আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে, তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি। তবে প্রতিটন চাল ও গমের মূল্য ৫০,০০০ টাকার বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তারা। এ হিসাবে রেশনের চাল ও গমের প্রতিকেজির দাম হবে ১০ টাকা।
চলতি অর্থবছরে প্রতিটন চালের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১৮৯৪.৫৮৯ টাকা এবং প্রতিটন গমের অর্থনৈতিক মূল্য ৪৭৩০২.১৪০ টাকা।
রেশনে বিতরণ করা চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিনের দাম বাড়ানো হবে কি-না, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে সরকারের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী), বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সংস্থাভেদে চার সদস্যের একটি পরিবার প্রতিমাসে ১.০৯ টাকা থেকে ১.৮০ টাকা দরে ৩৫ কেজি চাল ও ৩০ কেজি করে আটা পেয়ে থাকে। এছাড়া, প্রায় ৩ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চিনি, ১.২০ টাকা দরে ৮ কেজি মসুর ডাল এবং ২.৩০ টাকা দরে ৮ লিটার সয়াবিন তেল পায়। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা বর্তমানে ১.২০ টাকা কেজি দরে চাল ও আটা পাচ্ছেন।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাভেদে রেশনের চাল ও গম বা আটার মূল্যে সামান্য হেরফের রয়েছে, তবে প্রতি কেজি চাল ও গমের দাম ২ টাকার বেশি নয়। রেশন সুবিধার আওতায় পরিবারের আকারভেদে একেকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী একেক দামে রেশন সুবিধা পাচ্ছেন। বিভিন্ন সংস্থার জনবল অবসরে যাওয়ার পরও আজীবন রেশন সুবিধা ভোগ করছেন।
সরকার দেশের ভেতর থেকে বাজার মূল্যে কিনে কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করে এসব পণ্য রেশন হিসেবে বিতরণ করে। এখাতে সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করতে হচ্ছে। চাল ও গমের দাম কিছুটা বাড়ানোর কারণে ভর্তুকির পরিমাণ কমবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৭,৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
রেশনের চাল ও গমের মূল্য বাড়ানোর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, "এটি খুবই ভালো এবং সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত।"
তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে সকল রেশন পণ্যের দাম বাড়িয়ে আরও সমন্বয় করতে হবে। এমনকি, সরকারকে পর্যায়ক্রমে রেশনের ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নিতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের সব ধরনের সুবিধা তাদের বেতন-ভাতা এবং পেনশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে, এ এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮২-৮৩ সময়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রথমবারের মতো রেশন সুবিধা চালু করে বাংলাদেশ। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জনবলকে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।